রবীন্দ্রনাথ লিখেছিনেন- “নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু /পাছে পাছে তাতা থৈ থৈ”। বিশাল স্পেসের মধ্যেকার বস্তুর জন্ম মৃত্যুর বিষ্ময়কর নাচই প্রথমবারের মতো দেখলো বিজ্ঞান। এই প্রথম বিজ্ঞান চাক্ষুষ করলো নক্ষত্রের মৃত্যুকালীন বিস্ফোরণ। সুপারনোভা। নতুন নক্ষত্রের জন্ম প্রক্রিয়া। মহাকাশে যুগের পর যুগ ধরে প্রকৃতির নিয়মেই ঘটে চলে যে ঘটনা তাই প্রথমবার দেখলো বিজ্ঞান।
কী এই সুপারনোভা?
বিজ্ঞানী কার্ল সাগান বলেছিলেন, আমরা নক্ষত্রের সন্তান। যেসব পদার্থের সম্মিলনে আমাদের এই শরীর তৈরি সে উপাদান নক্ষত্রেই রয়েছে। আবার নক্ষত্রের বিস্ফোরণেই সৃষ্টি নতুন নক্ষত্রের। এযাবৎ কালে বিজ্ঞানের জানা রিয়েলিটি বা বাস্তবে যে সকল নক্ষত্র রয়েছে, তারা প্রত্যেকেই নিজেদের বিপুল ভরে নিজের অবস্থানে থাকতে না পেরে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটায়। এগিয়ে যায় নতুন এক পর্যায়ের দিকে। তখন সে নক্ষত্র ক্রমশ সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে পরিনত হয় সুপারনোভায়। রিয়েলিটির বিপুল টাইমে, অনবরত এইভাবে নক্ষত্রের মৃত্যু ও পুনর্জন্ম হচ্ছে। কেননা বিশাল এই স্পেসে শক্তির ক্ষয় নেই। বদল আছে। তাই নক্ষত্র মরে না কেবল। নতুন সৃষ্টিও করে। মৃত্যু ও পুনর্জন্মের মধ্যবর্তী পর্যায়ে ব্যাপক বিস্ফোরণের ছটা, গোটা গ্যালাক্সিই আলোকিত হয়ে ওঠে যে বিস্ফোরণের আলোয় তাই সুপারনভা। সুপারনোভা প্রকৃতপক্ষে নক্ষত্রের একটি নতুন দশা।
ঠিক কী দেখেছেন বিজ্ঞানীরা?
২০২০ র গ্রীষ্মে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমি বিভাগের বিজ্ঞানীরা একটি নক্ষত্রের অস্থিরাবস্থা দেখেন। দেখেন লাল সুপারজায়েন্টের মতো নক্ষত্রটি থেকে বিপুল আলো বিচ্চুরিত হচ্ছে। পৃথিবী থেকে ১২ কোটি আলোকবর্ষ দূরে ‘এনজিসি ৫৭৩১’ গ্যালাক্সিতে অবস্থিত ঐ নক্ষত্রটি আমাদের সূর্যের থেকে ১০ গুন ভর যুক্ত। ঐ নক্ষত্রটি বিস্ফারিত হয়ে সুপারনোভার পর্যায়ের দিকে এগিয়েছে। বিশাল এই স্পেসে অবিরাম কাল ধরে নক্ষত্রের এমন মৃত্যু আবার জন্ম ঘটছে। এই তত্ত্ব জানা থাকলেও, এযাবৎ কাল এই ভাঙাগড়া সচক্ষে দেখার অভিজ্ঞতা নেই বিজ্ঞানের।
এই প্রথম একটি নক্ষত্রের সুপারনোভা পর্যায়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া লম্বা সময়পর্ব ধরে চাক্ষুস করার অভিজ্ঞতা হলো বিজ্ঞানের। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, বার্কলে ইউনিভার্সিটি এবং ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক গত ১৩০ দিন ধরে নজর রেখেছিলেন ঐ বিশালাকার নক্ষত্রটির দিকে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা খেয়াল করেন আশ্চর্যজনক ভাবে বিস্ফোরণের সময় কোনো শব্দ নেই। গত ৬ ই জানুয়ারি ২০২২ তারিখে দ্যা অ্যাস্ট্রোফিজিকাল জার্নালে সংশ্লিষ্ট গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়। প্রধান লেখক উইন জ্যাকবসন গালান বলেন, এই ঘটনা তারার জন্ম নিয়ে আমাদের চিরাচরিত ধারণাকে বদলে দিল। একটা বড়সড় তারা ধ্বংস হয়ে কীভাবে নতুন তারার জন্ম দেয় তা আগে কখনো দেখা যায় নি। আমরা এই প্রথম।দেখলাম একটা লালচে বিশালাকার নক্ষত্র কীভাবে নিজে নিজে বিস্ফোরণ ঘটালো।