
ভুমিকম্প তো কতই ঘটে। কিন্তু এই প্রথমবার বিজ্ঞানীরা ২০২৫ সালের ২৮শে মার্চ ৭.৭ মাত্রায় মায়ানমারের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পের সময় পৃথিবীর ভূমি বিচ্ছিন্ন হওয়ার দৃশ্য ক্যামেরায় ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এর ব্যাপক ধ্বংসলীলায় ৪৯০০ এরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলটি ছিল মান্দালয় শহরের কাছাকাছি এবং এর কম্পন ব্যাংকক ,থাইল্যান্ড পর্যন্ত অনুভূত হয়।ভুমিকম্পটি সাগাইং চ্যুতি বরাবর ঘটেছিল যা বার্মা ক্ষুদ্র পাত(প্লেট) ও সুন্দা পাতের বিভাজন রেখা হিসেবে পরিচিত।এই চ্যুতির গতিটি ছিল সাধারণত Dextral strike slip বরাবর, অর্থাৎ যেখানে পৃথিবীর দুটি খণ্ড অনুভূমিকভাবে একে অপরকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়। ভূমিকম্পটি ৮০ সেকেন্ডেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল। তার মধ্যে প্রথম ৩০ সেকেণ্ড ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী ,ফলে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল জনবহুল এলাকায়।
থাজি শহরের কাছে এই প্লেটগুলোর গতিবিধির ধরন লক্ষ্য করে একটি ভিডিও বানানো হয় যেখানে ভূমিকম্প চলাকালীন ভূ-গঠন সরাসরি পরিবর্তিত হতে দেখা যায়। আরও দেখা যায় কিভাবে দুটি বিশাল ভূখণ্ড পরস্পরের থেকে বিপরীতে সরে যাচ্ছে ।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে(USGS) ব্যাখ্যা করেছে যে চ্যুতি হল দুটি শিলার মধ্যবর্তী ফাটল অঞ্চল যা ধীরে ধীরে বা হঠাৎ করে পরস্পরের থেকে সরে যেতে পারে। ভিডিওটির মাধ্যমেও সম্ভবত এরই স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছে। ভুমিকম্পের ব্যাপক প্রভাবস্বরূপ ৪৬০ কিলোমিটার দুরত্ব পর্যন্ত চ্যুতিরেখা বরাবর কম্পন ছড়িয়ে পড়ে । ভূগর্ভের প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে Strike Slip মেকানিসম ( দুটি ভূখণ্ডের অনুভূমিকভাবে একে অপরের পাশ দিয়ে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া)সক্রিয় হয়। ফলে ভয়াবহ কম্পন সৃষ্টি করে এবং মার্কেল্লি স্কেলে এর মাত্রা হয় ৯।
সাগাইং এবং আমারাপুরার মধ্যে ৪.৩ মিটার পর্যন্ত ভূমি স্থানচ্যুত হয়। কেন্দ্রস্থল থেকে উত্তরে ৭৫ কিলোমিটার এবং দক্ষিণে ৪২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধুমাত্র সিঙ্গু ও ওকত্বাইন শহরেই ১মিটার এর বেশি ভূমি সরতে দেখা গেছে।
গবেষকদের মতে, এই ভূমিকম্পটি এতটাই ধ্বংসাত্মক বৈশিষ্ট্যযুক্ত যে ভূমিকম্পের চ্যুতিরেখা বরাবর শিয়ার তরঙ্গের( যে তরঙ্গের সাথে ভূগর্ভের কণাগুলো লম্বালম্বিভাবে সরতে থাকে) গতির চেয়েও বেশি গতিতে ছড়িয়ে পড়ে।দ্রুত গতির ফলে ভূমিকম্পের শক্তি তীব্র হয় এবং ধ্বংসলীলা আরও বৃদ্ধি পায়।
এই ভূমিকম্পের ভিডিও ও সংকলিত তথ্য বিজ্ঞানীদের ভূগাঠনিক গতিবিধি সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে। এটি ভূমিকম্প গঠনে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার নতুন মডেল তৈরিতে ও চ্যুতি অঞ্চলের ঝুঁকি বিশ্লেষণে সাহায্য করতে পারে এবং ভবিষ্যতে ভূমিকম্প প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনা গঠনেও গুরু্ত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখবে।