প্রবালপ্রাচীরে সজারুর কাঁটা

প্রবালপ্রাচীরে সজারুর কাঁটা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ জুন, ২০২৫

বিস্ময়কর রঙিন প্রবাল প্রাচীর কেবল দর্শনধারী নয়, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় সুরক্ষার অপরিহার্য উপাদান। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সমুদ্র সজারুর (sea urchin) সংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে, হাওয়াইয়ের প্রবালপ্রাচীরগুলি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সমুদ্র সজারুরা প্রবাল পৃষ্ঠে জন্মানো শৈবাল খেয়ে প্রবালকে সজীব রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন তাদেরই সংখ্যা অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন তারা প্রবালের ক্যালসিয়াম কার্বোনেট কঙ্কাল ক্ষয় করতে থাকে। ফলত, প্রবাল দুর্বল হয়ে পড়ে। হাওয়াইয়ের হোনাউনাউ উপসাগরে, প্রতি বর্গমিটারে ৫১টি সজারু পাওয়া গেছে! এই সংখ্যা কপালে ভাঁজ ফেলারই মতন। এই কারণে,উপসাগরের প্রবাল প্রাচীরের কার্বোনেট উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বর্তমানে, প্রবালের গড় আচ্ছাদন মাত্র ২৮%। এই আচ্ছাদন ২৬% এর নীচে নামা মানেই প্রাচীর ধসে যাওয়া। বিশেষত অগভীর অঞ্চল, যেখানে সজারুর প্রভাব বেশি, সেখানে প্রবালের আচ্ছাদন অন্তত ৪০% হওয়া প্রয়োজন। কৃষিজ এবং শহুরে দূষণ এমনিই প্রাচীরের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। জলরাসায়নিক পরিবর্তন, প্রবালের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসা, তার উপর উষ্ণ সমুদ্রের কারণে প্রবাল রঙ হারাচ্ছে। এছাড়া, অতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে এই সজারুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, প্রবাল প্রাচীরগুলি প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করে, উপকূল অঞ্চলকে ঝড় ও সুনামির হাত থেকে রক্ষা করে। হাওয়াই হল প্রবাল-ভিত্তিক পর্যটনকেন্দ্র। একে কেন্দ্র করেই উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও কর্মসংস্থান তৈরি হয়। তাই প্রবাল প্রাচীরের অবনতি, অর্থনৈতিক সুবিধাগুলিকেও যে হুমকির মুখে ফেলবে তা বলাই বাহুল্য। এই সংকট মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন ইতিমধ্যেই। কিছু গবেষক প্রবালের সহবাসী শৈবাল ও ব্যাকটেরিয়ার জিনের পরিবর্তন করে তাদের তাপ-সহনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, যাতে প্রবাল উষ্ণ সমুদ্রে টিকে থাকতে পারে। প্রবাল প্রাচীর রক্ষায় স্থানীয় ও বিশ্বজোড়া এই দুই উদ্যোগেরই প্রয়োজন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + 16 =