ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগর জুড়ে প্রায় চব্বিশটা জায়গায় জলের বিভিন্ন গভীরতায় ডুবুরিরা দেখতে পেয়েছে প্লাস্টিক দূষণের প্রাচুর্য যা ইঙ্গিত দিচ্ছে কোন জিনিস সংরক্ষণের প্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে এবং কোথায়। গবেষকদের মতে আমাদের পৃথবীর প্রবাল প্রাচীর মোটেও সুরক্ষিত নয়। হাডসন পিনহেইরো, সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মেরিন বায়োলজির একজন জীববিজ্ঞানী বলেছেন, সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে প্লাস্টিক দূষণ আর প্রবাল প্রাচীরও এর থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ম্যাক্রোপ্লাস্টিক অর্থাৎ প্লাস্টিকের ছোটো ছোটো টুকরো থেকে শুরু করে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ এবং ট্রল ব্যাগের মতো বড়ো জিনিস প্রবালে রোগ ছড়ায়। আবার মাছ ধরার প্লাস্টিকের দড়ি প্রবাল প্রাচীরের সঙ্গে জড়িয়ে যায় এবং ক্ষতি করে। এই সমস্তই সমুদ্রে মাছের প্রাচুর্য এবং বৈচিত্র্য হ্রাস করে, এবং প্রবাল প্রাচীরের বাস্তুতন্ত্রকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। গবেষকরা দেখেন যে মেসোফোটিক অঞ্চলে প্লাস্টিকের পরিমাণ শীর্ষে এবং বেশিরভাগই মাছ ধরার ক্রিয়াকলাপ থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
দূষণের মোট পরিমাণের ৮৮% ছিল প্রায় দুই ইঞ্চি (পাঁচ সেন্টিমিটার) থেকে বড়ো ম্যাক্রোপ্লাস্টিক। গবেষকরা মনে করেন যে সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি ঢেউয়ের তীব্রতা, আবর্জনা অপসারণ, ডুবুরিদের অগভীর প্রবালপ্রাচীর থেকে আবর্জনা সরানো এর কারণ হতে পারে। গবেষণা চলাকালীন গবেষকরা সবচেয়ে দূরবর্তী প্রবাল প্রাচীর, যেমন সেন্ট্রাল প্যাসিফিকের জনবসতিহীন দ্বীপ সংলগ্ন প্রাচীরেও মানুষের ব্যবহার করা আবর্জনা খুঁজে পেয়েছেন। দূষণের সর্বনিম্ন ঘনত্ব — প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৫৮০ টি জিনিস — মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে দেখা গেছে। কোমোরোস, আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি দ্বীপে, দূষণের সর্বোচ্চ ঘনত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি- প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৮৪৫০০ টি জিনিস। গবেষকদের ভাবাচ্ছে যে এই প্লাস্টিক-বোঝাই গভীর প্রবালপ্রাচীর অধ্যয়ন করা আরও কঠিন হয়ে উঠছে, তাই এদের সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় ঘটতি থেকে যাচ্ছে। গবেষণাটি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যেখানে ক্যালিফোর্নিয়া একাডেমি অফ সায়েন্সেস, সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অংশগ্রহণ করেছেন।