‘প্রযুক্তিমণ্ডলে’ কার্বন

‘প্রযুক্তিমণ্ডলে’ কার্বন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

টেকনোস্ফিয়ার মানে হল প্রযুক্তিমন্ডল। মানুষের ব্যবহৃত এবং ফেলে-দেওয়া যাবতীয় বস্তুর সমষ্টি নিয়ে এই প্রযুক্তিমন্ডল। সম্প্রতি সেল রিপোর্ট্‌স সাস্টেনেবিলিটি পত্রিকায় একটা হিসেব বেরিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর মানুষ তার তৈরি দীর্ঘায়ু পদার্থসমূহের মধ্যে প্রায় ৪০ কোটি টন জীবাশ্ম-আহরিত কার্বন জমা করে চলেছে। এর মধ্যে প্রধান হল প্লাস্টিক, ঘরবাড়ি, মানুষের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো (ইনফ্রাস্ট্রকচার)। জানা গেছে, প্রকৃতিজগতে যে-পরিমাণ কার্বন আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি কার্বন আমরা জমা করেছি আমাদের তৈরি জিনিসপত্রের মধ্যে। এই পরিমাণটা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। প্রযুক্তিমন্ডলে কত কার্বন জমা হয়েছে তা জানার জন্য গবেষকরা একটা পদ্ধতি বার করেছেন। সারা বিশ্বে ২০১১ সালে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদনের জন্য কী পরিমাণ পদার্থ লেগেছে আর কী পরিমাণ মালপত্র তৈরি হয়ে বেরিয়ে এসেছে, তার একটা হিসেব বার করেছেন তাঁরা। কিছু শুধু ২০১১ কেন? কারণ, সারা বিশ্বে কেবল ওই বছরেরই পুরো হিসেবটা পাওয়া যায়। ওই পরিমাণ মালপত্র উৎপাদন করবার জন্য কতটা কার্বন লেগেছে, আর তৈরি হয়ে বেরিয়ে-আসা মালপত্রের মধ্যে কতটা কার্বন রয়েছে, সেটা তাঁরা হিসেব করে দেখেছেন । শুধু তৈরি-মালপত্র নয়, উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যবর্তী ধাপগুলোতে যেসব জিনিস লাগে তাদের মধ্যে কতখানি জীবাশ্ম-কার্বন থাকে সেটাও হিসেব করেছেন তাঁরা। বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রর মধ্যে গড়ে কতটা করে কার্বন থাকে তার একটা হিসেব আছে। যেমন প্লাস্টিকের মধ্যে গড়ে ৭৪% জীবাশ্ম-কার্বন থাকে। সেই অনুযায়ী, সব মিলিয়ে তাঁদের হিসেব মতো প্রযুক্তিমণ্ডলে দীর্ঘায়ু জিনিসপত্রর মধ্যে জমা হয়ে আছে ৯% নিষ্কাশিত জীবাশ্ম কার্বন। এর তাৎপর্য হল, ওই পরিমাণ কার্বন সহযোগে যদি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি করা যায়, তাহলে সেটা হবে ২০১১ সালে গোটা ইউরোপিয়ান সঙ্ঘ থেকে উৎসারিত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণের সমান। জানা গেছে, বড়ো বড়ো ভবন আর অবকাঠামোর মধ্যে ৩৪% জীবাশ্ম-কার্বন জমা হয়ে আছে। রবার আর প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্রর মধ্যে ৩০%। এছাড়া রাস্তা বানানোর জন্য ব্যবহৃত বিটুমেন-এ আছে ২৪%। বড়ো বড়ো মেশিন আর যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে ১৬%। এই তথ্যর সঙ্গে আরও কিছু অর্থনৈতিক তথ্য মিলিয়ে তাঁরা হিসেব করে বার করেছেন, ১৯৯৫ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে ৮৪০ কোটি টন জীবাশ্ম কার্বন প্রযুক্তিমণ্ডলে জমা হয়েছে। এটা ২০১৯ সালে সারা বিশ্ব থেকে নির্গত মোট কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রায় ৯৩%-এর সমতুল্য। গবেষকদের মতে, উৎপাদিত জিনিসপত্রগুলির আয়ু বাড়ালে এবং তাদের পুনর্ব্যবহারের (রিসাইক্‌ল) মাত্রা বাড়ালে বর্জ্য পদার্থের ধারাপ্রবাহে জীবাশ্ম-কার্বন মিশে যাওয়ার পরিমণ কমতে পারে। এছাড়া আবর্জনায় ভরাট-করা জমি থেকে বর্জ্য বেরিয়ে-আসার মাত্রা কমানোর জন্য পলিসি প্রণয়নের ওপরেও জোর দিয়েছেন তাঁরা।