প্রযুক্তি, ভাষাতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব

প্রযুক্তি, ভাষাতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব

আশীষ লাহিড়ী
Posted on ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

কম্পিউটার সহযোগে ভাষাতত্ত্ব চর্চার নাম কম্পিউটার লিঙ্গুইস্টিক্‌স। কম্পিউটার বা ডিজিট্যাল হিউম্যানিটিজ বলে এক নতুন বিষয়ও গড়ে উঠেছে। তাঁদের গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারছি, গত একশো বছরে ইংরিজি ভাষার অভিধানে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির প্রভাবে কী-কী শব্দ যোগ হয়েছে।
১৯২০-এর দশকে ব্রিটেনে ‘নাইলন’ কথাটি খুব চালু হয়েছিল নতুন কোনো মস্ত উদ্ভাবন বোঝাতে। ১৯৪০-এর দশকে স্বভাবতই ‘নিউক্লিয়ার’ শব্দটা লোকের মুখে মুখে ছড়িয়েছিল। ১৯৫০-এর দশকেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কথাটা মুখে মুখে প্রচলিত হয়েছিল। ১৯৭০-এর দশকে এল অ্যাপ, ভাইরাস, কারাওকে প্রভৃতি শব্দ। ১৯৮০-র দশকে ডিজিটাল যুগের সূচনা আর পরিবেশ নিয়ে গুরুতর দুশিন্তার শুরু। তাই একদিকে ওয়েব, গুগ্‌ল, ইমোজি, ব্লগ, অন্যদিকে ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’ প্রভৃতি কথার আবির্ভাব। একুশ শতকের শুরু থেকে সোশাল মিডিয়ার দৌলতে হ্যাশট্যাগ, সেলফি, পডকাস্ট প্রভৃতি শব্দ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১০ সাল থেকে নানারকম শব্দ নতুন নতুন অর্থ পরিগ্রহ করতে থাকে। যেমন ক্যাটফিশ বলতে বোঝাল অনলাইনে পরিচয় ভাঁড়িয়ে লোককে ধাপ্পা দেওয়া। ২০১০ সালে একটা তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছিল কীকরে একজন লোককে অনলাইনে ঠকানো হয়েছিল। সেখান থেকে এ নামের সূত্রপাত। এরকমই আরেকটা শব্দ হল deepfake. Fake মানে ভুয়ো। ডিপফেক-এর অর্থ গভীরভাবে ভুয়ো। একজনের ছবি, ভিডিও বা অডিও ক্লিপের ওপর অন্য একজনের ছবি, ভিডিও কিংবা অডিও ক্লিপ এমনভাবে বসিয়ে দেওয়া যে আসল-নকল বোঝা দায়। বিশেষ করে বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিপদের ফেলার জন্য এই “প্রযুক্তি” খুবই প্রচলিত। আর একটা কথা হল forever chemical. মানে সেইসব কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ যারা অক্ষয়, অমর। ব্যাকটেরিয়া তাদের খায় না, আগুন তাদের পোড়ায় না, জল তাদের গলায় না। বাংলায় বলতে পারি ‘চির-রাসায়নিক”। এরা লিভারের অসুখ, থাইরয়েডের গোলামাল, মুটিয়ে যাওয়া, প্রজনন ঘটিত সমস্যা, নানা ধরনের ক্যান্সার, শরীরের রোগ-প্রতিরোধতন্ত্রের হানি প্রভৃতি ঘটাতে পারে। বাচ্চাদের খেলনা, জামাকাপড়ে এসব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার খুবই বেশি, তাই বাচ্চারা এসব পদার্থের কুপ্রভাবের বিশেষ শিকার। হালে doomscroll শব্দটা খুব চলছে। অর্থ হল, সমাজমাধ্যমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেতিবাচক খবর দেখা/শোনা/পড়া কিংবা এক নাগাড়ে মাথা-গরম-করা ভিডিও দেখা। ইংরিজিতে doom মানে সর্বনাশ। আর কম্পিউটারের পর্দায় ওপর থেকে নীচে কিংবা এধার থেকে ওধারে চলে যাওয়াকে বলে scroll করা। সুতরাং ডুম্‌স্ক্রোল মানে হল, স্ক্রোল করতে করতে সর্বনাশের দিকে এগিয়ে চলা। এটা ব্যাপক হয়ে ওঠে কর্মহীন কোভিড-১৯-এর সময়, যখন লোকে কম্পিউটারে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে ফেসবুক, ইউ টিউব প্রভৃতি সামাজিক মঞ্চ একই ধরনের বিষয় বারবার দেখিয়ে ভয়াবহতা আর উদ্বেগ-আশঙ্কার একট ফাঁদ তৈরি করেছিল। এর কুফল নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হয়েছে। দেখা গেছে ডুম্‌স্ক্রোল করলে আতঙ্কগ্রস্ততা, উদ্বেগ-আশঙ্কা ঘটিত সমস্যা, হতাশা প্রভৃতি বাড়ে।
বাংলাতেও এ ধরনের শব্দ প্রচুর। আমরাও চেষ্টা করলে এমন একটা তালিকা বানাতে পারি না কি?