প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে কালো ডিম- বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে কালো ডিম- বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৮ জানুয়ারী, ২০২৪

প্রশান্ত মহাসাগরের ব্যাপ্তি, গভীরতা বিজ্ঞানীদের বার বার আকৃষ্ট করেছে। অন্যান্য সাগরের তুলনায় এই মহাসাগরের আকারও বেশ বড়ো। এর অতল সমুদ্রের গভীরতম কোণগুলো অনুসন্ধান করতে তাই বার বার ফিরে গেছে বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এই সাগর অন্বেষণ করা মানুষের কাছে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ, বিশেষ সরঞ্জাম ছাড়া মাত্র ৩৩২.৩৫ মিটার পৌঁছনো সম্ভব। এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, কিছু প্রাণী ভূপৃষ্ঠের হাজার হাজার ফুট নীচে, প্রচণ্ড চাপের পরিবেশে, সীমিত আলোয় এবং হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা তাপমাত্রা সহ্য করে বসবাস করে।
একটি যুগান্তকারী অভিযানে, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর ইয়াসুনোরি কানো, কুরিল-কামচাটকা ট্রেঞ্চ অঞ্চলে এক বিশেষ ধরনের নিয়ন্ত্রিত যান বা রিমোটলি অপরেটেড ভেহিকেল ব্যবহার করে, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৬,২০০ মিটার গভীরতায় কুচকুচে কালো রঙের ডিম দেখতে পান। এই রহস্যময় কালো ডিম পরীক্ষা করে, হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ কেইচি কাকুই প্রাথমিকভাবে অনুমান করেছিলেন যে তারা সম্ভবত একধরনের এককোশী জীব হতে পারে, বৈজ্ঞানিক ভাষায় যাকে বলে প্রোটিস্ট। প্রোটিস্ট এক সাধারণ ইউক্যারিওটিক জীব যা উদ্ভিদ, প্রাণী বা ছত্রাক কোনোটাই নয় তবে এরা বেশিরভাগ জলে, স্যাঁতসেঁতে স্থলজ পরিবেশে, এমনকি পরজীবী হিসাবে বাস করতে পারে। কিন্তু ভালো করে নিরীক্ষণ করে গবেষকরা দেখেন যে এই ডিমের মধ্যে একটি দুধের মতো তরল পদার্থ পাওয়া গেছে। ডিমের ভেতর থেকে ভঙ্গুর সাদা দেহ আলাদা করার পর গবেষকরা এক ধরনের কালো গোলাকার বস্তু চিহ্নিত করেন যা সম্ভবত ফ্ল্যাটওয়ার্ম বা চ্যাপ্টাকৃমির কোকুন। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে চ্যাপ্টা কৃমির অবশিষ্টাংশ সহ চারটি অক্ষত ডিমের ক্যাপসুল রয়েছে। ডিএনএ বিশ্লেষণ থেকে এটা প্রমাণ হয় যে এরা পৃথিবীতে পরিচিত সবচেয়ে গভীরে বসবাসকারী এক ধরনের চ্যাপ্টা কৃমি। আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের জীবনের প্রাথমিক পর্বের যে ধরন পাওয়া যায় সেগুলোর সাথে অগভীর-জলের কিছু প্রাণীর মিল রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + eighteen =