প্রশান্ত মহাসাগরে ক্রমবর্ধমান আগ্নেয়গিরি

প্রশান্ত মহাসাগরে ক্রমবর্ধমান আগ্নেয়গিরি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্য আইডাহোর থেকেও বড়ো একটি স্থলভূমি যদি কল্পনা করা যায় প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে নিমজ্জিত। না না কোনো বিজ্ঞান কল্পকাহিনী চলচ্চিত্রের দৃশ্য নয়, এটি একটি বাস্তব ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য যা মেলানেশিয়ান সীমান্ত মালভূমি নামে পরিচিত। অতিকায় এই গঠনটি প্রায় ২২২,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে। মেলানেশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উত্তর-পূর্ব প্রান্ত বরাবর শত শত মাইল ধরে বিস্তৃত, মেলানেশিয়ান সীমান্ত মালভূমি। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের পূর্বে অবস্থিত, সমুদ্রের নীচের এই মালভূমিটি ভূতাত্ত্বিক এবং গবেষকদের জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই অনুসন্ধানের বিষয় কারণ তাদের মতে এটি আজও বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বৈশিষ্ট্যটি বৃহৎ আগ্নেয় প্রদেশ হিসাবে পরিচিত অগণিত গঠনগুলোর মধ্যে একটি। এই ধরনের ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য সাধারণত সমুদ্রের প্লেট টেকটোনিক থেকে গঠিত। তবে মেলানেশিয়া বর্ডার মালভূমি (এমবিপি) কীভাবে তৈরি হল সে বিষয়ে বিশেষ গবেষণা নেই। নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞানী কেভিন কনরাডের নেতৃত্বে গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দলের গবেষণা বর্তমানে এমবিপি গঠনের প্রক্রিয়া খুঁজে বের করেছে, যা আমাদের সমগ্র গ্রহের গঠনকারী শক্তিগুলোকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
মালভূমিটি আগ্নেয় শিলা দ্বারা গঠিত তা প্রমাণ হয়েছে মালভূমি থেকে খনন করে বের করা শিলা থেকে – প্রায় ১২২ থেকে ৮৩ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেসিয়াস নরমাল সুপারক্রোনের সময়ে নির্গত আগ্নেয়গিরির ম্যাগমা শীতল হয়ে এটি গঠিত হয়েছে। খনন করে পাওয়া দুষ্প্রাপ্য খনিজ প্রমাণ করে যে এমবিপির জন্ম সহজবোধ্য নয়, কমপক্ষে ২৫টি স্বতন্ত্র আগ্নেয়গিরির কাঠামো তার সৃষ্টির জন্য দায়ী। তাই এই আগ্নেয়গিরির কাঠামোর স্থির বৃদ্ধি সম্পর্কে আরও তথ্য আমাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে অতীতের বিলুপ্তির ঘটনাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে। কনরাড এবং তার দল মালভূমি এবং আশেপাশের কিছু পরিকাঠামো থেকে নেওয়া আইসোটোপ অনুপাত এবং ভূ-রসায়নের অন্যান্য পূর্ব প্রকাশিত তথ্য ব্যবহার করেন ভূত্বকের গঠন সম্পর্কে ধারণার জন্য। হটস্পট হল পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে উত্থিত ধোঁয়ার মতো উষ্ণ ম্যান্টেল। যখন একটি টেকটনিক প্লেট একটি হটস্পটের উপর দিয়ে চলে যায় তখন আগ্নেয়গিরির একটি সারি তৈরি হয়। ঠিক যেমন একটি জ্বলন্ত মোমবাতির উপর দিয়ে ধীরে ধীরে ওয়াক্স পেপার নিয়ে গেলে গলিত মোমের একটি রেখা তৈরি হয় ঠিক তেমন এই আগ্নেয়গিরি গঠিত হয়। আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপের ফলস্বরূপ তৈরি হয় দ্বীপ পুঞ্জ, পর্বত শৃঙ্গ এবং সমুদ্রে নিমজ্জিত পাহাড়। গবেষকদের ধারণা প্রায় ১২০ মিলিয়ন বছর আগে যখন ডাইনোসররা আধিপত্য বিস্তার করেছিল তখন দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের কোথাও লুইসভিল হটস্পট নামে পরিচিত একটি অস্পষ্ট-অবস্থিত প্লুম এমবিপি-র ভিত্তি স্থাপন করেছিল। সেই সময় ম্যাগমার একটি প্রবাহ নির্গত হয় যা রবি রিজ ও আশেপাশের আরও কয়েকটি সমুদ্রের তলার নিমজ্জিত পাহাড় গঠনে সাহায্য করে। প্রায় ৪৫ মিলিয়ন বছর পরে, ভূত্বকের সেই একই দুর্বল অংশটি রুরুতু-আরাগো হটস্পট নামে পরিচিত একটি দ্বিতীয় অঞ্চলের সাথে মিলিত হয়েছিল, যেটি নতুন দ্বীপ এবং সিমাউন্টের গঠনের জন্য দায়ী। বর্তমানে সামোয়ান দ্বীপপুঞ্জের জন্য দায়ী একটি তৃতীয় হটস্পট সিমাউন্ট এবং দ্বীপগুলোর গঠনকে পুনরায় সক্রিয় করবে এবং প্রায় ২০ মিলিয়ন বছর আগে আগ্নেয়গিরির এক নতুন সূচনা হয়েছে। আজ অবধি, ভূত্বক গঠনকারী প্রচণ্ড শক্তি, এমন একটি প্রক্রিয়ায় এই পরিকাঠামোকে আকৃতি দিতে থাকছে যা থেকে এটা স্পষ্ট যে বৃহৎ আগ্নেয় প্রদেশের গঠন কতটা জটিল হতে পারে।