প্রশ্ন খাতে কৃবু-র ব্যয়

প্রশ্ন খাতে কৃবু-র ব্যয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ জুন, ২০২৫

পৃথিবী যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ( কৃ বু)-র জোয়ারে ভাসছে, তখন আমাদের প্রতিটি প্রশ্নের জবাবে একটা বিদ্যুৎচক্র জ্বলে ওঠে। সেই জবাবগুলি কেবল তথ্য দেয় না, উৎপন্ন করে উষ্ণতা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু বড় ভাষা মডেল (LLM) একটি উত্তর দিতে যতটুকু বিদ্যুৎ খরচ করে, তা দিয়ে একটি মাঝারি মাপের ল্যাপটপ ঘণ্টাখানেক চালানো যায়। বিশ্লেষণ চলেছে এমনই কৃ বু ভিত্তিক ১৪টি শক্তিশালী মডেল নিয়ে। যেখানে প্রশ্নের তালিকায় রাখা হয় ইতিহাস, দর্শন, গাণিতিক যুক্তি, আইন ও বিমূর্ত বীজগণিত। প্রতিটি উত্তর চিহ্নিত হয়েছে টোকেন নামক ডিজিটাল শব্দাংশে। ধরা যাক, লেখা হল “unbelievable”। এটি কৃ বু মডেলের কাছে ভেঙে যেতে পারে -“un” + “believ” + “able” রূপে। এখানে সবগুলোই আলাদা শব্দাংশ যা বিদ্যুতে পরিণত হয়। আর এই অতিরিক্ত ‘টোকেন’ বা শব্দাংশ ব্যবহারের জন্যই লম্বা উত্তর। অর্থাৎ বেশি শক্তি খরচ। তার মানে বেশি কার্বন নির্গমন। গবেষণা বলছে, ভাবনাধর্মী বড়ো কৃ বু মডেলগুলি গড়ে ৫৪৩টি চিন্তাধারা টোকেন বের করে ফেলছে একটি উত্তরের আগে। তুলনায় সংক্ষিপ্ত মডেলগুলি মাত্র ৩৮ টোকেনেই কাজ সেরে ফেলে। এমনকি প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় একটি কৃ বু চিপ (NVIDIA A100) ঠিক কতটা বিদ্যুৎ খরচ করল, তা-ও মেপেছেন গবেষকরা। সবচেয়ে ভারী Cogito মডেলটি, প্রশ্নের ৮৫ শতাংশের কাছাকাছি সঠিক উত্তর দিলেও, এটি অন্যান্য মডেলের তুলনায় তিনগুণ বেশি কার্বন ছাড়ে। কল্পনা করা যায়, একটি ভারী কৃ বু মডেল একটি দিন টানা চালানো মানে দুই সপ্তাহ ধরে একটি ফ্রিজ চালানো! আর যদি তাকে হাজারটা প্রশ্ন করা হয়, তাহলে তার CO₂ নির্গমন একটা গাড়ির কয়েক মাইল চালানোর সমান হয়ে দাঁড়াবে! তাহলে কি এই প্রযুক্তিকে এখানেই থামিয়ে দেওয়া উচিত?একেবারেই নয়। বরং গবেষক ডাউনার বলছেন, এখন দরকার প্রযুক্তির “স্মার্ট ব্যবহার”। সব প্রশ্নে বড় মডেল ব্যবহার করার দরকার নেই। কৌতূহলের জন্য হালকা কৃ বু, আর গভীর বিশ্লেষণের জন্য ভারী মডেল রাখলেই হবে। এখন দরকার আরও কিছু বিশেষ উপাদান। ক. রিয়েলটাইম শক্তি ড্যাশবোর্ড। যাতে ব্যবহারকারী বুঝতে পারেন, তার প্রতিটি প্রশ্নে কতটা CO₂ নির্গমন হচ্ছে। এবং খ. তার সাথে দরকার উন্নত সফটওয়্যার,যেগুলো অপ্রয়োজনীয় যুক্তি বাদ দিয়ে কম টোকেনেই কাজ সারবে। তবুও সব কিছুর কেন্দ্রে থাকবে বিদ্যুৎ, আর সেই বিদ্যুৎ যদি আসে কয়লার ভাঁড়ার থেকে, তবে সবচেয়ে দক্ষ কৃ বু- তেও থাকবে ধোঁয়ার ধাক্কা। সুতরাং, ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিন উপাদানের উপর: পরিচ্ছন্ন শক্তি, আরও দক্ষ কোডিং ভাষা আর সচেতন ব্যবহার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − 6 =