প্রসাধনী শিল্পে ও নানা ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত রাসায়নিক জিনগত পরিবর্তনের জন্য দায়ী

প্রসাধনী শিল্পে ও নানা ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত রাসায়নিক জিনগত পরিবর্তনের জন্য দায়ী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

এপিজেনেটিক্স এমন রাসায়নিক প্রক্রিয়া যা জিনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে, আমাদের কোশ, কলা এবং অঙ্গগুলিকে পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম করে। এই অভিযোজিত সুবিধার একটি নেতিবাচক দিক রয়েছে। ডিএনএর স্থিতিশীল জেনেটিক বিন্যাসের এপিজেনেটিক নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলকভাবে টক্সিন দ্বারা ব্যাহত হওয়ার পক্ষে বেশ সংবেদনশীল। সম্প্রতি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও বার্সিলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিবন্ধে বলা হয় যে ফর্মালডিহাইড নামক পদার্থ, সাধারণত বিভিন্ন গৃহস্থালী এবং প্রসাধনী পণ্যে, দূষিত বাতাসে উপস্থিত থাকে, এটি নির্মাণে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়, এই পদার্থটি সাধারণ এপিজেনেটিক বিন্যাসের একটি শক্তিশালী পরিবর্তনকারী।
গবেষণাটি শরীরে ফর্মালডিহাইডের উচ্চ ঘনত্বের প্রভাবের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। ফর্মালডিহাইড ইতিমধ্যেই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি (নাসোফ্যারিঞ্জিয়াল টিউমার এবং লিউকেমিয়া), ফ্যাটি লিভারের কারণে হেপাটিক অবক্ষয় (স্টেটোসিস) এবং হাঁপানির সাথে যুক্ত। ফর্মালডিহাইড প্রধানত আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং এটি জলীয় মাধ্যমে সহজেই দ্রবীভূত হয়, ফলে এটি আমাদের শরীরের সমস্ত কোশে অনায়াসে পৌঁছে যায়। গবেষকরা এই বিষয়ে জোর দেন যে ফরমালডিহাইড শুধুমাত্র একটি উল্লেখযোগ্য দূষিত পদার্থ নয়, যা শুধুমাত্র দূষিত ধোঁয়ায় পাওয়া যায়, এটি বিভিন্ন সুইটনারের মতো সাধারণ খাদ্যতালিকায় থাকা পদার্থের বিপাকের মাধ্যমে আমাদের দেহের মধ্যেও উৎপন্ন হতে পারে৷ তাছাড়া , আমাদের কোশগুলি ক্রমাগত ফর্মালডিহাইড তৈরি করছে, এটি এমন একটি পরিচিত মিউটেজেন যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। ফর্মালডিহাইড হল MAT1A প্রোটিনের ইনহিবিটর, যা S-Adenosyl-L-Methionine (SAM) এর প্রধান উৎপাদক এবং এই অণুটি রাসায়নিক গ্রুপ “মিথাইল” এর সার্বজনীন দাতা যা এপিজেনেটিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ফর্মালডিহাইডের সংস্পর্শে এসএএম হ্রাস পায় এবং হিস্টোন প্রোটিনের মিথাইলেশন নষ্ট হয়। হিস্টোন আমাদের ডিএনএ-র হাজার হাজার জিনের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। সামগ্রিকভাবে, এই কাজটি ফর্মালডিহাইডের বিষাক্ততার আরও বেশি দিক প্রকাশ করেছে।
গবেষকরা জানান যে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই যতটা সম্ভব ফর্মালডিহাইডের ব্যবহার সীমিত করছেন, কিন্তু এখনও রেজিন তৈরিতে, প্লাস্টিক উৎপাদনে, প্রসাধনী শিল্পে এটি উচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, এটি অটোমোবাইল পেট্রল এবং তামাকের ধোঁয়া দহনের সময়ও উদ্ভূত হয়। এইজন্য তাদের মতে পরিবেশগত এবং স্বাস্থ্য নীতিগুলি প্রচার করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − nine =