প্রসাধন সামগ্রীতে অ্যাসবেস্টস

প্রসাধন সামগ্রীতে অ্যাসবেস্টস

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

অ্যাসবেস্টস এমন এক রাসায়নিক যা শরীরে ঢুকলে হতে পারে ক্যান্সার। বিশ শতক জুড়ে অ্যাসবেসটস ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল – নির্মাণ সামগ্রী থেকে শুরু করে ব্রেক প্যাড এমনকি বিখ্যাত বহু সিনেমার সেটে নকল তুষারপাত দেখাতে বহুল রূপে ব্যবহৃত হত এই অ্যাসবেস্টস। ১৯৬০-এর দশকে বলা হয়েছিল অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শে এলে একটি দুরারোগ্য ব্যাধি, মেসোথেলিওমা হতে পারে। এই ধরনের ক্যান্সারে প্রাথমিকভাবে ফুসফুস প্রভাবিত হয় তবে পেট এবং হৃদযন্ত্রকেও প্রভাবিত করতে পারে। ফলস্বরূপ, পণ্য হিসাবে অ্যাসবেস্টস যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল – তবে তা ঘটেছিল ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। দেখা গেছে মেসোথেলিওমা রোগে আক্রান্ত রোগীর ৮০% অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শে এসেছে। অ্যাসবেস্টসের কারণে এই রোগে আক্রান্ত হলে তা বেশ জটিল, প্রায় ৩০-৫০ বছর স্থায়ী হয়। একুশ শতকে, কিছু মহিলা প্রসাধনী সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করে বলেন প্রসাধন সামগ্রীতে ব্যবহৃত অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শে আসার ফলে তারা জটিল মেসোথেলিওমা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ভূততত্ত্বের ভিত্তিতে অ্যাসবেস্টস নানা ধরনের খনিজের মিশেল, তবে ছটি তন্তুযুক্ত অ্যাসবেস্টস খনিজ রয়েছে যা মেসোথেলিওমার কারণ হিসেবে পরিচিত; সাদা রঙের ক্রিসোটাইল, বাদামি রঙের অ্যামোসাইট, নীল রঙের ক্রোসিডোলাইট, অ্যান্থোফাইলাইট, তন্তুযুক্ত ট্রমোলাইট এবং অ্যাক্টিনোলাইট। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে দেখলে দেখা যাবে অ্যাসবেস্টস কিছু তন্তুর বান্ডিল দ্বারা গঠিত, যা ইংরেজিতে বলা হয় ফাইব্রাস অ্যাসবেস্টিফর্ম। অনেকটা দড়ির মতো দেখতে এই বান্ডিল ছোটো ছোটো তন্তুতে বিভক্ত হতে পারে। যদি কোনোভাবে অ্যাসবেস্টিফর্ম তন্তু ছোটো ছোটো আণুবীক্ষণিক তন্তুতে বিভক্ত হয়ে যায়, তবে তা ধূলিকণার সঙ্গে সহজেই শ্বাস গ্রহণের সময় আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ফুসফুসে একবার ঢুকে গেলে সেগুলো ফুসফুসের ঝিল্লি বা মেসোথেলিয়ামে পৌঁছে যায়। আর যখন অ্যাসবেস্টস তন্তু ফুসফুসের মেসোথেলিয়ামে ঢোকে তখন তা কয়েক দশক ধরে সেখানে থাকতে পারে এবং ছোটো ছোটো ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের শরীর অ্যাসবেস্টস তন্তুকে বহিরাগত বস্তু হিসাবে চিহ্নিত করে। ক্ষতি নিরাময়ের জন্য, অ্যাসবেস্টস ফাইবারকে ভেঙে ফেলার উদ্দেশ্যে ইমিউন কোশকে সেখানে পাঠায়। তবে অ্যাসবেস্টস ফাইবার ইমিউন কোশের আক্রমণ প্রতিরোধ করে। অন্যদিকে অ্যাসবেস্টস তন্তু ভাঙতে ইমিউন কোশ যে রাসায়নিকগুলো তৈরি করে সেগুলো মেসোথেলিয়ামকে আক্রমণ করে, আর মেসোথেলিওমা রোগে আমরা আক্রান্ত হয়ে পড়ি। প্রসাধনীতে ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাসবেস্টস ব্যবহার করার কোনো তথ্য না থাকলেও ট্যালকম খনিজগুলোতে কম মাত্রায় অ্যাসবেস্টস দূষণের ঝুঁকি রয়েছে। আই শ্যাডো থেকে শুরু করে ব্লাশার, ফেস পাউডার সবেতেই ‘ট্যালক’ মেক আপের একটি সাধারণ উপাদান। প্রসাধন সামগ্রীতে ট্যালক ব্যবহার করা হয় কারণ এর আর্দ্রতা শোষণকারী ক্ষমতা রয়েছে আর সহজে দলা পাকিয়ে যায়না। ফলে প্রসাধন সহজে ব্যবহার করা যায়। ২০২৪ সালে বিবিসি তদন্তের অংশ হিসাবে, ট্রান্সমিশন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি ব্যবহার করে আটটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত প্রসাধন সামগ্রীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই বিশ্লেষণ থেকে, দুটি নমুনায় অ্যাসবেস্টস পাওয়া গেছে। অ্যাসবেস্টস এবং ট্যালকের মধ্যে মিল থাকার ফলে, অ্যাসবেস্টস, ট্যালকাম খনিজের মধ্যে ছোটো বড়ো সবরকমভাবেই জমা হতে পারে। প্রসাধন সামগ্রীতে অ্যাসবেস্টস আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে, পরীক্ষা প্রয়োজন। তবে এই ধরনের প্রসাধন সামগ্রী এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।