প্রস্তরযুগে নারী-পুরুষের সমানাধিকার 

প্রস্তরযুগে নারী-পুরুষের সমানাধিকার 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জভেইনিয়েকি সমাধিক্ষেত্র লাটভিয়ার উত্তরাঞ্চলে একটি প্রসিদ্ধ স্থান । এখানে ৫,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ তাদের প্রিয়জনদের কবর দিয়েছে। মোট ৩৩০টিরও বেশি সমাধি নিয়ে এটি ইউরোপের প্রস্তর যুগের অন্যতম বড় কবরস্থান। সম্প্রতি এই সমাধিক্ষেত্রটি নিয়ে নতুন এক গবেষণা দীর্ঘদিনের প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিয়েছে।

আমরা প্রায়ই শুনেছি, প্রস্তর যুগে পুরুষরাই ছিল প্রধান শিকারি, আর নারীরা ঘরে রান্না, বাচ্চা সামলানো আর হস্তশিল্পে ব্যস্ত থাকতেন। এই ধারণাটির নাম “শিকারি পুরুষ” তত্ত্ব। কিন্তু নতুন গবেষণা দেখাচ্ছে, ব্যাপারটা পুরোপুরি একরকম ছিল না।

ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এমি লিটল এবং তাঁর সহকর্মীরা এই প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রকল্পের অধীনে আধুনিক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে এখানে পাওয়া পাথরের যন্ত্রগুলি পরীক্ষা করেন। দেখা গেল, শুধু পুরুষই নয়, বরং নারী ও শিশুর সমাধিতেও প্রচুর পাথরের যন্ত্র রাখা হয়েছে। অনেক পাথরের যন্ত্র পশুর চামড়া প্রক্রিয়াকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। আবার কিছু যন্ত্র একেবারেই ব্যবহার হয়নি। মনে হয় সেগুলো কেবল মৃত্যুর পরের আচার-অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিছু যন্ত্র ইচ্ছা করেই ভেঙে সমাধিতে রাখা হয়েছে, যেন তা বিশেষ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত রীতির অংশ।

সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো, পুরুষদের মতোই নারীদেরও পাথরের যন্ত্রের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হয়েছে, কখনো কখনো তাদের চেয়েও বেশি। এমনকি শিশু ও প্রবীণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এধরনের সামগ্রী বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, সমাজে নারীরা শুধুই রান্না বা গৃহকর্মে সীমাবদ্ধ ছিলেন না; নারীরাও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং প্রতীকী রীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদেরও ছিল এক বিশেষ কৃষ্টিগত ও ধর্মীয় ভূমিকা।

গবেষক ড. লিটলের মতে, প্রাণীর দাঁতের লকেট ও অন্যান্য জিনিস নিয়ে অনেক আগেই গবেষণা হয়েছে, কিন্তু কেন সাধারণ মনে হওয়া পাথরের যন্ত্র মৃতদের দেওয়া হতো তা ছিল এক উত্তরহীন প্রশ্ন। এই গবেষণা সেই রহস্যের কিছুটা সমাধান করেছে। তাঁর মতে, পাথরের যন্ত্র শুধু দৈনন্দিন কাজের উপকরণ ছিল না। এগুলো ছিল রীতি, প্রতীক ও স্মৃতির অংশ।

সার্বিয়ার বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আনজা পেত্রোভিচ-ও জানান, কেবল পুরুষদের কেন্দ্র করে সমাধির সামগ্রী ব্যাখ্যা করা ভুল। নারীর এবং শিশুর স্মৃতিচর্চাতেও এসব যন্ত্র সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অনেক যন্ত্র কখনো ব্যবহারই করা হয়নি, যা এর আধ্যাত্মিক ও প্রতীকী তাৎপর্য নির্দেশ করে। এমনকি, এগুলো ভাঙার প্রথা পূর্ব বাল্টিক অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা এক অভিন্ন কৃষ্টির দিকেও ইঙ্গিত দেয়।

 

সব মিলিয়ে বলা যায়, ছোট ছোট জিনিস, যেমন একটি ভাঙা পাথরের যন্ত্র, সেটাও আমাদের হাজার হাজার বছরের পুরোনো জীবনের অজানা কাহিনী বলে দিতে পারে। প্রস্তর যুগে মানুষ কীভাবে মৃত্যুবরণ করত, প্রিয়জনকে স্মরণ করত, আর বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজত এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পেতে এসব সমাধি আজও আমাদের সাহায্য করছে।

 

সূত্র: “Multiproxy study reveals equality in the deposition of flaked lithic grave goods from the Baltic Stone Age cemetery Zvejnieki (Latvia)” by Anđa Petrović, Jessica Bates, et.al;(10.09.2025), PLOS ONE.

DOI: 10.1371/journal.pone.0330623

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × one =