
প্রাইমেটদের মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আমাদের ধারণার মোড় ঘুরিয়েছে এক নতুন গবেষণা। ফ্রান্সের মন্টপেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট ও জার্মান প্রাইমেট সেন্টারের গবেষকরা ১২১টি প্রজাতির ২৫৩টি প্রাইমেট জনসমষ্টির উপর গবেষণা চালিয়েছেন। দেখা গেছে, নারী বা পুরুষ কর্তৃত্ব কোনওটাই সর্বজনীন নয়। বরং, সামাজিক গঠন, প্রজনন কৌশল ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতার ভারসাম্য বদলায়।
গবেষণায় দেখা যায়, ১৫১টি জনসমষ্টির মধ্যে মাত্র ১৭% ক্ষেত্রে পুরুষ কর্তৃত্ব স্পষ্ট, আর ১৩% ক্ষেত্রে নারীর কর্তৃত্ব লক্ষনীয়। বাকি ৭০% ক্ষেত্রে উভয় লিঙ্গের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে, নির্দিষ্ট কোনও পক্ষের আধিপত্য নেই। এটি প্রমাণ করে যে, নারী কর্তৃত্ব বিরল ব্যতিক্রম নয়, বরং প্রাকৃতিক বিবর্তনের একটি অংশ।
নারী কর্তৃত্ব সাধারণত সেই প্রজাতিগুলিতে দেখা যায় যেখানে নারীরা প্রজননের উপর বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখে। এই নমুনাটি দেখা যায় তাদের মধ্যে যারা একগামী, বৃক্ষবাসী বা যেখানে পুরুষ এবং স্ত্রী আকারে কাছাকাছি। এই সমাজে নারীরা পুরুষদের প্রজনন চেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে এবং শারীরিক বলপ্রয়োগ এড়িয়ে চলতে সক্ষম। এছাড়াও, যেখানে নারী-নারী প্রতিযোগিতা প্রবল, যেমন নির্জন বা জোড়ায় জোড়ায় বসবাসকারী প্রজাতিতে, সেখানেও নারীর কর্তৃত্ব দেখা যায়। অর্থাৎ, নারী আধিপত্য প্রকাশ করে কম যৌন দ্বিরূপতা, স্বল্প সময়ের যৌন গ্রহণযোগ্যতা এবং গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সুষম লিঙ্গ অনুপাত।
অন্যদিকে, পুরুষ কর্তৃত্ব বেশি দেখা যায় ভূমিতে বসবাসকারী, বহুবিবাহকারী প্রজাতিতে, যেখানে পুরুষদের শরীর বড়, দাঁত বড় এবং শারীরিক বলের মাধ্যমে তারা আধিপত্য কায়েম করে। এসব সমাজে পুরুষ নিছক শারীরিক শক্তির মাধ্যমেই আধিপত্য বিস্তার করে।
গবেষণাটি আরও দেখায়, একই প্রজাতির ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীতেও নারী কর্তৃত্বের মাত্রা পরিবর্তিত হয়। যেমন কঙ্গো নদীর দক্ষিণে দলবদ্ধভাবে বসবাসকারী বানর প্রজাতি বোনোবোদের মধ্যে নারী প্রাধান্যের হার ৪৮% থেকে ৭৯% পর্যন্ত হতে পারে।
উপসংহারে বলা যায় যে প্রাইমেট সমাজে নারী ও পুরুষ কর্তৃত্ব স্বাভাবিকভাবেই গড়ে ওঠে না। এটি নির্ভর করে বিভিন্ন প্রজনন কৌশল, সামাজিক গঠন এবং পরিবেশগত অবস্থার ওপর। এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি মানবসমাজে লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকার মূল্যায়নেও নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।
তথ্য সূত্রঃ Journal Proceedings of the National Academy of Sciences.