
সাইবেরিয়া থেকে ডেনমার্কের মধ্যযুগীয় কবরস্থান – ৩৭,০০০ বছরের মানব সংক্রমণের ইতিহাস উদঘাটন করেছেন গবেষকরা। ১,৩১৩টি মানুষের দেহাবশেষের দাঁত ও হাড় থেকে প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ২১৪টি ভিন্ন রোগজীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। প্লেগসহ হেপাটাইটিস বি’র জীবাণুও এর অন্তর্ভুক্ত। কোপেনহেগেন ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় জেনেটিসিস্ট এস্কে উইলার্সলেভ বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করছিলাম, চাষাবাদ ও পশুপালনের শুরুতেই রোগজীবাণুর সংক্রমণ বেড়ে যায়। এখন ডিএনএ প্রমাণ দিল যে এটি অন্তত ৬,৫০০ বছর আগেই শুরু হয়েছিল।” গবেষণায় ৪০০ বিলিয়নেরও বেশি ডিএনএ ক্রম বিশ্লেষণ করে প্রাচীন জীবাণু নির্ধারণ করা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, তিন-চতুর্থাংশ কঙ্কালে সংক্রমণের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা দেখায় প্রাচীন মানুষের জীবনে রোগভোগের অভাব ছিল না। সবচেয়ে পুরনো নমুনাটি ৩৭,০০০ বছর পুরানো। সেখানে মুখগহ্বরের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ছিল, যেগুলো আজও মানুষের শরীরে থাকে। তবে রক্তের মাধ্যমে ছড়ানো সংক্রমণের সূত্রপাত স্থায়ী বসবাস আর গবাদি পশুর সাথে ঘনিষ্ঠতার পর। প্রায় ৮,০০০ বছর আগে ইউরেশিয়ার গ্রামাঞ্চলে পশুবেষ্টনী ও ঘনবসতি গড়ে ওঠার সঙ্গে রোগের সংখ্যা বেড়ে যায়। ৬,৫০০ বছর আগে প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে লাফিয়ে পড়া জীবাণু (জুনোটিক) দেখা দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হলো প্লেগের ব্যাকটেরিয়া য়েরসিনিয়া পেস্টিস। এর প্রাচীনতম জিন ঘটিত প্রমাণ মিলেছে ৫,৫০০ বছর আগে পশ্চিম রাশিয়ায়। এই আবিষ্কার প্লেগের ইতিহাসকে দুই হাজার বছর পিছিয়ে দিয়েছে এবং দেখিয়েছে যে চাষীদের জীবনেও মহামারির ছায়া ছিল। প্রায় ৫,০০০ বছর আগে স্টেপ অঞ্চল থেকে গাড়িবাহিত যাযাবর গোষ্ঠী ইউরেশিয়ায় গবাদি পশু ও রোগ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ঐ সময়ের কঙ্কালে প্লেগ, বারংবার জ্বর ও ম্যালেরিয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এগুলি স্থানীয় জনপদকে ধ্বংস করে নতুন আগন্তুকদের জন্য স্থান তৈরি করত। ব্রোঞ্জ যুগে নতুন জীবাণুর আগমনে মানুষের রোগপ্রতিরোধী জিনে তীব্র পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। শূকর, ছাগল, ভেড়াকে পোষ মানানোর পর কাউ-পক্স, লেপ্টোস্পাইরোসিস ও মাংস-বাহিত রোগের প্রমাণও মিলেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ নতুন সংক্রমণ পশুর কাছ থেকেই আসে। মানুষ- পশু ঘনিষ্ঠতা রোগের পরিবেশ পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। কিছু কঙ্কালে একাধিক রোগজীবাণুর উপস্থিতিও ধরা পড়েছে, যেমন ভাইকিং যুগের এক খুলিতে হেপাটাইটিস বি ও প্লেগের জিন একসঙ্গে ছিল। এই ধরনের যৌথ সংক্রমণ হঠাৎ মৃত্যুহার বাড়াতে পারে।
যক্ষ্মার জিন ঘটিত চিহ্ন পাওয়া না গেলেও এর মানে প্রাচীন মানুষের ফুসফুস নিরাপদ ছিল না। গবেষক মার্টিন সিকোরা জানান, অতীতের সফল পরিব্যক্তিগুলো ভবিষ্যতেও ফিরে আসতে পারে। এই প্রাচীন জিনোমগুলি ভবিষ্যতের সংক্রমণ বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে আধুনিক রোগ স্ট্রেইনে পরীক্ষা চালাচ্ছে, যা এই তথ্যকে আরও শক্তিশালী করবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাচীন প্লেগ স্ট্রেইনে ymt জিন ছিল না, যা আজকের প্লেগকে মাছির শরীরে টিকে থাকতে সাহায্য করে। এরকম বিবর্তনের মোড়গুলো এখনো বাদুড় বা ইঁদুর-আশ্রিত ভাইরাসে লুকিয়ে থাকতে পারে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা এই নতুন জিন ঘটিত তথ্য জলবায়ু ও ভূমি ব্যবহারের মডেলের সঙ্গে মিলিয়ে ভবিষ্যতের সংক্রমণ ঝুঁকির পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হবেন। এই কঙ্কালগুলো প্রমাণ করে কীভাবে রোগ আমাদের গঠন করেছে এবং আজকের অনেক অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি অতীতে আমাদের সংগ্রামের ফল। এ এক বিরল দলিল।
তথ্যসূত্র : Nature Journal