প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানে আলোর জাদু

প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানে আলোর জাদু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ নভেম্বর, ২০২৪

 

প্রাচীন কালে মানুষের একমাত্র আলোর উৎস ছিল, সূর্য। আর মানুষ তখন থেকেই বুঝেছে, বেঁচে থাকার জন্য সূর্য অপরিহার্য। তাই আমরা দেখি পৃথিবীর সমস্ত সভ্যতায় – মিশর, গ্রিস, ভারত, এশিয়া, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় সূর্যকে দেবতা হিসেবে পুজো করা হত। আর নানা শারীরিক অসুস্থতা থেকে সুস্থ হতেও মানুষ সূর্যের দ্বারস্থ হত।
খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালে এবেরস প্যাপাইরাস নামে প্রাচীন মিশরীয় চিকিৎসা নথিতে একটি মলমের কথা রয়েছে। মলমটি ওয়াইন, পেঁয়াজ, কাঁচ, ফল এবং গাছের নির্যাস লোবান এবং গন্ধরস দিয়ে তৈরি হত। যা ব্যক্তি লাগিয়ে সূর্যের আলোতে থাকত। আবার কাশির চিকিৎসার জন্য, একটি পাত্রে ওষুধের উপাদান রেখে তা সূর্যের আলোতে রাখতে হত। সম্ভবত সূর্যের উষ্ণতায় উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশত। ক্রিস্টপূর্ব ১৫০ শতকে বর্তমানে যা টার্কি, সেখানকার চিকিৎসক অ্যারেটিয়াস লিখেছেন, সূর্যের আলো আলস্যের মতো রোগ কমায়, বর্ণনা থেকে বোঝা যায় এখানে মানসিক অবসাদের কথা বলা হয়েছে। মুসলিম পণ্ডিত ইবন সিনা, দ্য ক্যানন অফ মেডিসিনে লিখেছেন, সূর্যের উষ্ণতা পেট ফাঁপা, হিস্টিরিয়া থেকে হাঁপানিতেও উপকারী। তিনি বলেছিলেন যে সূর্য “মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে” আর “জরায়ু পরিষ্কার করার জন্য” উপকারী।
এতো গেল সূর্যের উষ্ণতার কথা। কিন্তু পরে জনস্বাস্থ্য নিয়ে যুগান্তকারী কাজ করা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল তার লেখা বইতে বলেছেন, রোগীদের টাটকা, হাওয়া আর সরাসরি সূর্যের আলো পাওয়া দরকার। তিনি বিশ্বাস করতেন, সূর্যের আলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বিনাশ করে। সত্যিই কিছু ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস সূর্যের আলোয় নষ্ট হয়ে যায়। আমেরিকার ডাক্তার এডউইন ব্যাবিট, আলো ও রঙের ওপর কাজ করে ক্রোমোলুম নামে একটা রঙিন কাচের জানলা আবিষ্কার করেছিলেন। যার ভিত্তিতে ১৯২০ সালে দিনশাহ ঘড়িয়ালি নামে এক ভারতীয় স্পেকট্রোক্রোম নামে এক যন্ত্র তৈরি করেন। এই যন্ত্রের বিভিন্ন রঙের আলোতে নির্দিষ্ট সময় বসলে নানা রোগ সারত বলা হত। যেমন এর সবুজ আলোয় বসলে পিটুইটারি গ্রন্থি ভালভাবে কাজ করত। হলুদ আলো হজমে সাহায্য করত।
বর্তমানে লাইট থেরাপি চিকিৎসায় কাজে লাগানো হয়। জন্ডিসে অসুস্থ সদ্যোজাত শিশুদের নীল আলোয় ফোটোথেরাপি চিকিৎসা করা হয়। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার, যা শীতকালীন বিষণ্নতা নামে পরিচিত তাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়মিত সাদা বা নীল আলোয় উন্মুক্ত করে চিকিত্সা করা যেতে পারে। অতিবেগুনী আলো ত্বকের চিকিত্সা যেমন সোরিয়াসিসে ব্যবহৃত হয়। লাইট থেরাপি সৌন্দর্যেও তার অবদান রাখছে। এলইডি মাস্ক ত্বকের দাগ ছোপ সূক্ষ বলি রেখা দূর করে ত্বকে জেল্লা বাড়ায়, ব্রণ সারায়, বার্ধক্যের লক্ষণ কমায়। কিন্তু সব ধরনের আলোর মতো, এর ঝুঁকি ও সুবিধা উভয়ই রয়েছে।