
সম্প্রতি দশ লক্ষ বছরেরও বেশি বিস্তৃত সময়ের ম্যামথ বংশের পূর্বে অজানা বহু জিন-তথ্য জানা গেছে। যা তাদের বিবর্তনীয় ইতিহাস সম্পর্কে নতুন দৃষ্টি আকর্ষণের দাবি রাখে। গবেষকরা ম্যামথ জীবাশ্ম থেকে ৩৪টি মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম (মাইটোজেনোম) সফলভাবে বের করে এনে বিশ্লেষণ করেন। যার মধ্যে ১১টি প্রাথমিক এবং মধ্য প্লাইস্টোসিন যুগের। এই নমুনাগুলি আনুমানিক ১.৩ কোটি থেকে ১২৫,০০০ বছর আগের। মলিকিউলার বায়োলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনে প্রকাশিত এই গবেষণায়, সময়ের সাথে জিনগত বৈচিত্র্যের খোঁজ এবং রহস্য সমাধানে, প্রাচীন ডিএনএগুলিকে কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তার হদিশ পাওয়া যায়। স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এবং প্যালিওজেনেটিক্স সেন্টারের প্রধান গবেষক, জে. ক্যামিলো চাকন-ডুক বলেন, ” বহু যুগ ধরে, গুরুত্বপূর্ণ জনসংখ্যাগত ঘটনাগুলি কিভাবে ম্যামথগুলির জিন-বৈচিত্র্যকে নানাকারে গড়েছে, তারই এক অভূতপূর্ব আভাস আমাদের এই বিশ্লেষণগুলি দেয়”। আজকের জীববৈচিত্র্যের বেশিরভাগই গত ২.৫ কোটি বছরে অনেক বিবর্তিত হয়েছে। এই বৈচিত্র্যকে আজকের ছাঁচে আসতে, বিবর্তনীয় প্রক্রিয়াগুলিকী ছিল তা বোঝা দরকার। তার সাথে দরকার, এই সময়কাল জুড়ে জিন -তথ্যের নাগাল পাওয়া। সংরক্ষণগত অসুবিধার কারণে এখনও পর্যন্ত খুব কম ডিএনএ নমুনাই এক লক্ষ বছরের ইতিহাসের গণ্ডি পার করতে পেরেছে। সেখানে, দশ লক্ষ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত ম্যামথ নমুনা থেকে ডিএনএ পুনরুদ্ধার করা গেল! ফলে এই গবেষণা প্রজাতির বিবর্তনীয় ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে সময় ভিত্তিক নমুনা সংগ্রহ বা ‘টেম্পোরাল স্যাম্পলিংয়ের’ গুরুত্বের জন্য মহিমান্বিত । পূর্বে প্রকাশিত ২০০ টিরও বেশি ম্যামথ মাইটোজিনোমের সাথে এই নতুন মাইটোজিনোমগুলি বিশ্লেষণ করে, গবেষকরা দেখতে পান, ম্যামথ বংশের বৈচিত্র্যের ঘটনাগুলি প্রাথমিক এবং মধ্য প্লাইস্টোসিনের সময় সু-বর্ণিত জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের সাথে মিলে যাচ্ছে। তাদের অনুসন্ধানগুলি দেখাচ্ছে, প্রধান ম্যামথ বংশের একটি প্রাচীন সাইবেরিয়ান উৎস রয়েছে। তাদের জনসংখ্যার পরিবর্তনশীল গতি কীভাবে স্বতন্ত্র বংশধরদের সম্প্রসারণ এবং সংকোচনে অবদান রাখতে পারে, তাও জানাচ্ছে। গবেষণাটি কেবল বিশাল বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের ধারণাকেই এগিয়ে নিয়ে যায় না বরং প্রাচীন ডিএনএ গবেষণার বৃহত্তর ক্ষেত্রেও এটি বিশেষ অবদান রাখে। দলটি একটি উন্নত আণবিক ঘড়ির তারিখ নিরূপণ কাঠামো তৈরি এবং প্রয়োগ করে। রেডিওকার্বন ডেটিং সীমার বাইরে নমুনার বয়স অনুমান করার জন্য জিন -তথ্য কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তা দেখায়। এই পদ্ধতিগত অগ্রগতি বিলুপ্ত এবং বিপন্ন প্রজাতির উপর ভবিষ্যত গবেষণার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসাবে কাজে আসবে। স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্যালিওজেনেটিক্স সেন্টারের সিনিয়র লেখক অধ্যাপক লাভ ডালেন বলেন, ” বর্তমান ফলাফলগুলির সাথে আগের ফলাফল যোগ করে, আমরা প্রথমবারের মতো লক্ষ লক্ষ বছর বয়সী জিনোমের রিপোর্ট তৈরি করেছি। গবেষণার অন্তর্ভুক্ত ৩৪টি নতুন পর্যায়ক্রম- নিরূপিত ম্যামথ মাইটোজিনোমের ১১টি ১ লক্ষ বছরেরও বেশি পুরনো। দলটি কানাডার ইউকন টেরিটরির ওল্ড ক্রো নদীতে পাওয়া ২ লক্ষ বছরেরও বেশি সময় আগের প্রাচীনতম পরিচিত ম্যামথ ডিএনএ শনাক্ত করে। পূর্ববর্তী গবেষণা (ভ্যান ডের ভালক এট আল., ২০২১) নিশ্চিত করে, এটি দশ লক্ষ বছর আগের ম্যামথগুলি পরবর্তী ম্যামথগুলির সাথে খুব একটা সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। গবেষণাটি প্রাচীন নমুনার বয়স অনুমান করার জন্য, ডিএনএ-ভিত্তিক পদ্ধতিগুলিকে পরিমার্জন করে। বিবর্তনীয় ইতিহাসের সঠিক পুনর্গঠনের পথ প্রশস্ত করে। অত্যাধুনিক আণবিক কৌশল এবং গণনাগত অগ্রগতির সমন্বয়ের মাধ্যমে, এই গবেষণা বিলুপ্ত প্রজাতির জিনগত অতীত উন্মোচনে গভীর-সময়ের ডিএনএ-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে। ভবিষ্যতের গবেষণা এই পদ্ধতিগুলিকে অন্যান্য দীর্ঘ-বিলুপ্ত বা বিপন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারে, যা বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।