প্রাচীন ট্রাইলোবাইটের স্ফটিকের চোখ ও তার রহস্য

প্রাচীন ট্রাইলোবাইটের স্ফটিকের চোখ ও তার রহস্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ জুলাই, ২০২৩

ক্যামব্রিয়ান পিরিয়ডে সন্ধিপদী অমেরুদণ্ডী পতঙ্গ ট্রাইলোবাইটস আবির্ভূত হয়, যা পারমিয়ান পিরিয়ডের শেষে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ট্রাইলোবাইট প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল কিন্তু তার আগে তারা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীতে ছিল। এই ট্রাইলোবাইট নামক বিলুপ্ত প্রাণীদের চোখগুলো শক্ত স্ফটিকের মতো খনিজ ক্যালসাইট দিয়ে তৈরি ছিল। ট্রাইলোবাইটের জীবাশ্ম থেকে পাওয়া লেন্সের ভাঙা অংশ পরীক্ষা করে এই ক্যালসাইটের মতো স্ফটিক উপাদান পাওয়া গেছে। এই ধরনের চোখের উপাদান বর্তমানে কোনো প্রাণীতে পাওয়া যায়না। তাদের অদ্ভুত পাথরের তৈরি চোখ, তাদের জীবাশ্মগুলিতে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত রয়েছে।
এই ফসিল থেকেই আমরা জানতে পারি যে ট্রাইলোবাইটের, পোকামাকড়ের মতো কম্পাউন্ড আই বা অক্ষিপুঞ্জ ছিল, যার মধ্যে ফটোরিসেপশন ইউনিটের ক্লাস্টার রয়েছে যা ওমাটিডিয়া নামে পরিচিত। এই প্রতি ওমাটিডিয়ার নিজস্ব ফটোরিসেপ্টর এবং লেন্স রয়েছে।
বিশুদ্ধ ক্যালসাইট স্বচ্ছ তাই আলো এটা ভেদ করে ফোকাস করতে পারত, তারপর ফটোরিসেপ্টর আলো সনাক্ত করতে পারত। কীটপতঙ্গের দৃষ্টিশক্তির মতো, ট্রাইলোবাইটগুলো কোনো বস্তুর নড়াচড়া সনাক্ত করতে পারত, তবে কোনো বস্তুর সমগ্র অংশ দেখতে পেত না। অর্থাৎ কীতপতঙ্গ যেমন মোজাইকের মতো টুকরো টুকরোভাবে জুড়ে কোনো বস্তু দেখতে পায়, সম্ভবত ট্রাইলোবাইট সেভাবেই দেখতে পেত।
ট্রাইলোবাইটের তিন ধরনের চোখের নমুনা পাওয়া গেছে। সবচেয়ে পুরোনো আর সহজেই পাওয়া যায় এমন চোখকে বলা হচ্ছে হলোক্রোয়াল, এটাতে ওমাটিডিয়া ছোটো, যা একটা কর্নিয়াল ঝিল্লি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল, আর সংলগ্ন লেন্সগুলি একে অপরের সাথে সরাসরি যুক্ত। অ্যাবাথোক্রোয়াল চোখ শুধুমাত্র ইওডিসিডি পরিবারে পাওয়া যায়; প্রতিটা ছোটো লেন্স আলাদা আলাদা পাতলা কর্নিয়া দ্বারা আচ্ছাদিত। সিযোক্রোয়াল চোখ ফ্যাকোপিনা সাবঅর্ডারে পাওয়া গেছে। এখানে লেন্সগুলো বড়ো, একটা অন্যটা থেকে আলাদা আর প্রত্যেকের নিজস্ব কর্নিয়া আছে।
এই পতঙ্গের চোখে ক্যালসাইট থাকার জন্য আলো চোখের লেন্সে দুভাগে ভেঙে প্রবেশ করত, ছোটো ওমিটিডিয়ার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ সমস্যা না হলেও সিযোক্রিয়াল চোখের ক্ষেত্রে বিষয়টা বেশ জটিল। তাই গবেষকরা এই ধরনের চোখের দৃষ্টির বিষয়ে আরো গবেষণা করছেন। এই খবর ১২ই জুলাই নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 + 5 =