
নতুন এ আই মডেল ‘ইনক’ নির্ণয় করেছে যে ডেড সি স্ক্রলস বা ইজরায়েলের পশ্চিম তীরে মৃত সাগরের বাইবেল-সম্পর্কিত প্রাচীন ধর্মীয় নথির প্রকৃত বয়স যা জানা ছিল তার থেকে বহু শতাব্দী বেশি। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে নেদারল্যান্ডের গ্রোনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল। এর বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে ২০২৫ সালের ৪ঠা জুন প্লস ওয়ান জার্নালে।
এতদিন এই ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক দলিলের বয়স নির্ধারণ মূলত প্রাচীন হস্তলিপি বিশ্লেষণ-এর ভিত্তিতে করা হতো, কিন্তু এই পদ্ধতির কোনও দৃঢ় বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না। “ইনক” মডেলটি এই সীমাবদ্ধতা দূর করেছে, কারণ এটি একত্রে রেডিওকার্বন ডেটিং, প্রাচীন লেখার ধরন বিশ্লেষণ এবং ডিপ লার্নিং ভিত্তিক কৃবু (এ আই ) ব্যবহার করে আরও নির্ভরযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট তারিখ অনুমান করতে সক্ষম।
গবেষকরা ২৪টি প্রাচীন নথির নমুনার উপর রেডিওকার্বন পরীক্ষা করে, এবং ডিজিটাল হস্তলিপি বিশ্লেষণের জন্য বাইনেট নামক নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন। এটি লেখার অক্ষরের আকার এবং কালি-চিহ্ন বিশ্লেষণ করে নির্ভুল প্যাটার্ন শনাক্ত করে। এরপর এসব তথ্য ইনক-এ প্রদান করে নথিগুলোর বয়স অনুমান করা হয়। এর মাধ্যমে প্রায় ৩০ বছরের পাল্লার মধ্যে তারিখ নির্ধারণ সম্ভব হয়েছে, যা রেডিওকার্বন ডেটিং থেকেও অনেক সময় বেশি সুনির্দিষ্ট।
ইনক মডেল দিয়ে প্রাথমিকভাবে ১৩৫টি প্রাচীন ধর্মীয় নথির চিত্র বিশ্লেষণ করা হয়। এই মডেলকে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করে গবেষকরা নথিগুলির লেখার সময়কাল ৫০ বছরের পাল্লার ভেতরেই চিহ্নিত করতে পেরেছেন, এমনকি ২০০০ বছর আগের নথির ক্ষেত্রেও।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার হলো, বিশেষ দুটি বাইবেললের টুকরো এই প্রথমবারের মতো তাদের ঐতিহাসিক লেখকের সময়কালেই রচিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। যেমন- Qohelet বইটি ধারণা করা হত, হেলেনিস্টিক যুগের (খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতক) কোনো বেনামী লেখকের লেখা। এতদিন সলোমন রাজাকেই এর উৎস বলা হতো। এই নতুন এ আই মডেল শুধু বাইবেল সংক্রান্ত ইতিহাস নয়, উপরন্তু প্রাচীন ইহুদি লিপি, রাজনীতি, ধর্মীয় আন্দোলন, এবং শিক্ষার বিকাশ নিয়ে গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ভবিষ্যতে এই পদ্ধতি অন্যান্য প্রাচীন পাণ্ডুলিপির তারিখ নির্ধারণেও ব্যবহার করা যেতে পারে।