মিশরের অক্সিরাইঙ্কাস যা আধুনিক কালে আল-বাহানসা নামে পরিচিত, সেই গ্রামের কাছে বহু প্রাচীন সময়ের এক ডজনেরও বেশি মমিদের জিভে সোনার আবরণ আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। এক সময়ে মনে করা হত এই সোনার পাত মৃতদের পরকালে কথা বলার ক্ষমতা প্রদান করে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন শহর অক্সিরাইঙ্কাসে, ৩০৫ থেকে ৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের টলেমেয়িক যুগের একটি সমাধি থেকে বেশ কিছু ধনসম্পদ আবিষ্কার করেছেন। এই সমাধিসৌধে কেবল ১৩টি সোনার জিভই নয়, সোনার নখওয়ালা একটি মমিও রয়েছে; এবং সঙ্গে রয়েছে তাবিজ, শেষকৃত্যের জন্য ব্যবহৃত মাটির পাত্র, একটি ঘড়া যার মধ্যে মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে বের করে নেওয়া অঙ্গ রয়েছে, এবং সোনার পাত দিয়ে আবৃত দেবতা, তারা আঁকা এক সুবিশাল দেয়াল। প্রাচীন মিশরে সমাধিতে সোনার জিভ খুব কমই পাওয়া গেছে। এর কারণ সম্ভবত আংশিকভাবে লুটপাট, তবে পরকালে কেন এই জিনিস গুরুত্বপূর্ণ তার একটা আভাস পাওয়া যায়। মিশরীয় দেবতা ওসিরিসের দরবারে যখন মৃত মানুষদের দাঁড়াতে হয় তখন যাতে সেই মৃত মানুষেরা কথা বলতে পারে সেই জন্যই এই ব্যবস্থা। অন্যদিকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নখে সোনার আবরণ ব্যবহার করা হত এবং প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিশ্বাস করেন যে ওগুলো সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করত – মৃতের শরীরের অংশ সংরক্ষণ পদ্ধতিতে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে এবং আধ্যাত্মিক বিপদ থেকে বাঁচাতে। টলেমেয়িক যুগের যে মোট ৫২টি মমি আবিষ্কার হয়েছে, সেগুলো একটি বৃহৎ সমাধির অন্তর্ভুক্ত যেখানে ৩০০টি মমি পাশাপাশি শায়িত ছিল। সেখানে বিভিন্ন তাবিজ এবং ‘স্কারাব’ রাখা হত যা মিশরীয় দেবতা হোরাস, থোথ, আইসিস, আনুবিস, ওসিরিস, আতুম এবং নাট-কে চিত্রিত করেছিল। মিশরের মানুষেরা মনে করতেন এই ‘স্কারাব’ সৌভাগ্য বহন করে এবং হৃদপিণ্ডকে পরলোকের যাত্রায় রক্ষা করে। মমি তৈরির সময় হৃদপিণ্ডই একমাত্র অঙ্গ যা দেহে অবশিষ্ট রাখা হত কারণ বিশ্বাস করা হত যে হৃদপিণ্ড একজন ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এবং স্মৃতি সংরক্ষণ করে যা পরলোকে তার প্রয়োজন হবে।