২০১৫ সালে দুটি তাপপ্রবাহে ভারত ও পাকিস্তানে ৩৫০০ মানুষ মারা যায়। মৃত্যুর সংখ্যাটা এই শতাব্দীর শেষদিকে পৌঁছতে পারে কয়েক কোটিতে, নতুন একটি ক্লাইমেট সিমুলেশনে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গ্রিনহাউস গ্যাসের বাড়বাড়ন্ত যদি থামানো না যায়, তাহলে দক্ষিন এশিয়ার কৃষিপ্রধান অঞ্চলগুলি ( মুখ্যত ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকা ) ভবিষ্যতে মারাত্মক তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হবে, সায়েন্স অ্যাডভান্সে ২রা অগস্ট বেরিয়েছে এই রিপোর্ট।
ই টি এইচ জুরিখের ক্রিস্টোপ শার বলছেন, “গবেষণার ফলাফল সত্যিই উদ্বেগের”। সম্ভাব্য ক্ষতির মুখে পড়তে পারে যে সমস্ত অঞ্চল, সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই বাস করে গ্রামে, উপকূলীয় অংশে অথবা সমুদ্রতল থেকে নিচু নদী অববাহিকায়। তাদের চাষবাস পশুপালন জীবনধারণ সেই অঞ্চলগুলিতেই। এয়ার কন্ডিশানার বা গরম থেকে বাঁচার অত্যাধুনিক সুযোগসুবিধা শহরবাসীদের মতো তারা পাবে না।
গবেষণার দায়িত্বে থাকা পরিবেশবিজ্ঞানী জেরেমি পল ও তাঁর টিমের কাজ অনুযায়ী, পারস্য উপসাগরের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতেও প্রায় একইরকম তাপপ্রবাহের ভ্রূকুটি নেমে আসতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার এই সম্ভাব্য চরম জলবায়ু তাঁদেরও আশ্চর্য করেছে।
মানুষের নিজের শরীর ঠাণ্ডা রাখার যে উপায়, যুগপৎ উষ্ণতা-আর্দ্রতা বৃদ্ধির ফলে মানুষ সেই ক্ষমতা হারাবে। আর্দ্র অবস্থায় পারিপার্শ্বিক উষ্ণতাকে বলা হয় ‘Wet-bulb Temperature’ । এই উষ্ণতাসূচক ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশী হলেই, মানুষের দেহের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এমন মাত্রাতিরিক্ত উষ্ণতায় সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষও কয়েকঘণ্টার বেশী টিকতে পারে না, জানাচ্ছেন জেরেমি পল।
পারস্য উপসাগর, লোহিতসাগর, সিন্ধু ও গঙ্গা অববাহিকা এবং পূর্ব চীনে ওয়েট-বাল্ব টেম্পারেচার সর্বাধিক। ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল অবধি সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এই অঞ্চলগুলিতে গড় ওয়েট-বাল্ব তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ভবিষ্যতে যা আরও ব্যাপকহারে বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা।
গ্লোবাল-ওয়ার্মিং এ লাগাম না টানলে, পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রায় ৪.২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে ২১০০ সালের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে, দক্ষিণ এশিয়ার ৪% মানুষ ওয়েট-বাল্ব টেম্পারেচারের শিকার হতে পারে । জনসংখ্যার ৭৫% কে সহ্য করতে হবে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অস্বস্তিকর আর্দ্র পরিবেশ।
জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবগুলি যদি রূপায়ণ করা সম্ভবপর হয়, তাহলে হয়তো এই ৭৫% হিসেবটা নেমে আসবে ৫৫%, আশা বিজ্ঞানীদের ।