প্রাণীদের কৃষ্টি-বৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ নীতি

প্রাণীদের কৃষ্টি-বৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ নীতি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ মে, ২০২৫

বহু প্রাণী গোষ্ঠীর মধ্যেই জটিল ও অনন্য সামাজিক আচরণ লক্ষ করা যায়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ শিম্পাঞ্জি। খাবার খাওয়ার জন্য শিম্পাঞ্জিদের ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী, আলাদা আলাদা কৌশল ব্যবহার করে। যেমন, কিছু শিম্পাঞ্জি পোকামাকড়ের বাসা থেকে উইপোকা তুলতে ডাল ব্যবহার করে, আবার কিছু শিম্পাঞ্জি বাদাম ভাঙতে পাথর ব্যবহার করে। এই ধরনের আচরণ কিন্তু জিনগতভাবে নির্ধারিত নয়। বরং এগুলো সামাজিকভাবে শেখা এবং তা প্রজম্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসে। প্রাণীদের আচরণের এই কৃষ্টি-বৈচিত্র্যর দিকটি প্রায়ই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় উপেক্ষিত হয়। পূর্বের বেশিরভাগ সংরক্ষণ নীতিতে, কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকার একই প্রজাতির সব প্রাণীকে একটি একক প্রাণীগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে এসেছে। তবে প্রাণীগোষ্ঠীর বিভিন্ন দলে যে আচরণগতভাবে বিশাল পার্থক্য থাকতে পারে সে বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য নতুন একটি উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

রাষ্ট্রসংঘের কনভেনশন অন মাইগ্রেটরি স্পিসিজ প্রভৃতি সংরক্ষণ সংস্থাগুলি প্রাণীদের এই কৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যগুলিকে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার সাথে সংযুক্ত করতে এগিয়ে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, এই সংস্থা এমন একটি কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করেছে যা পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে স্পার্ম তিমির স্বতন্ত্র গোত্রগুলোকে স্বীকৃতি দেয়। এরা আলাদা ধরনের শব্দ ও শব্দসংকেতের সাহায্যে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আগে অঞ্চলটির সব স্পার্ম তিমিকে একটি বড় গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হতো।কিন্তু নতুন কর্মপরিকল্পনার আওতায়, প্রতিটি গোষ্ঠীকে আলাদাভাবে সংরক্ষণের জন্য মূল্যায়ন করা হবে। শুধু তিমিদেরই নয়, শিম্পাঞ্জিদের কৃষ্টি-বৈচিত্র্য রক্ষার জন্যও এই সংস্থা একটি নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এছাড়াও, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার ২০২৮ সালের মধ্যে, সংরক্ষণ কৌশলে শিম্পাঞ্জিদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে অন্তর্ভুক্ত করার আরোও একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তবে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বিদ্যমান বিশাল আচরণগত বৈচিত্র্য বিবেচনা করে সঠিক পরামর্শ প্রদান করা মোটেই সহজ কাজ নয়। চলতি মাসের শুরুতে এক গবেষণা প্রকাশনায়, সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোর সংকলন দেওয়া হয়। এটি স্তন্যপায়ী, পাখি, মাছ এবং অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীদের কৃষ্টি-বৈচিত্র্য তুলে ধরেছে। শুধু তাই নয়, গবেষণা করতে গিয়ে তাঁরা যে শিক্ষা পেয়েছেন, তাও প্রকাশ করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, সামাজিকভাবে জটিল আচরণগুলো প্রজাতিসমূহকে টিকিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং অনন্য সামাজিক আচরণগুলিকে বিবেচনায় রেখে আরও বিস্তৃত সংরক্ষণ উদ্যোগ গড়ে তোলাই পরিবর্তনশীল জলবায়ুর মধ্যে প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × four =