প্লাস্টিকময় পৃথিবী

প্লাস্টিকময় পৃথিবী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ আগষ্ট, ২০২৪
পৃথিবী

একই সাবধানবাণী বারংবার বলা হলে একঘেয়েমি চলে আসে, ঠিক কথাই কিন্তু শত শত বাণীতেও মানুষের টনক নড়ছে না। তাই এই বিষয় নিয়ে যত বেশি বলা যায় ততই ভালো। বিষয়টি আর কিছু নয়, আমাদের অতি পরিচিত প্লাস্টিক দূষণ। তবুও আজ এক অদ্ভুত ছবি দেখা গেছে। মেরু ভালুকের মুখে থেকে ঝুলছে একটা প্লাস্টিক। ছবিটি ২০২৪ সালের ওশান ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার পুরস্কারের জন্য শর্টলিস্ট করা হয়েছে। নরওয়ের কাছে স্যালবার্ড দ্বীপপুঞ্জের কিপের্ট দ্বীপে ফটোন্যাচারালিস্ট সেলিয়া কুজালার তোলা ছবিটি মনে করিয়ে দেয় যে আর্কটিকের জনবসতিহীন অঞ্চলগুলোও প্লাস্টিক দূষণের কবল থেকে রেহাই পায়নি। মেরু ভালুকের এই ছবি আর্কটিক অঞ্চলের প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা এবং আঞ্চলিক প্রজাতির উপর এর প্রভাব তুলে ধরেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার কর্তৃক তৈরি করা রেড লিস্টের অন্তর্গত ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত, মেরু ভালুক একাধিক হুমকির সম্মুখীন। ২০১৬ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ এই ভালুকের সংখ্যা ৩০% কমে যাবে। এর প্রথম কারণ হল জলবায়ু পরিবর্তন। সমুদ্রের বরফ গলে এদের শিকার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে। তবে প্লাস্টিক দূষণ সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। খাবারের খোঁজে মেরু ভালুক ক্রমে ল্যান্ডফিলের দিকে ঝুঁকছে। আলাস্কা এবং কানাডার দক্ষিণ বিউফোর্ট সাগরের ২৮% মেরু ভালুকের পেটে প্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে আবার অর্ধেক ভালুকের তীব্র গ্যাস্ট্রাইটিসের লক্ষণ দেখা গেছে। তাদের খাদ্যনালীতে ব্লকেজ সৃষ্টি হচ্ছে। গবেষকদের মতে ভালুকেরা যখন তীরবর্তী অঞ্চলে খাবারের সন্ধান করে তখন মানুষের ফেলা আবর্জনার স্তূপ থেকে তারা প্লাস্টিক খায়। তাছাড়াও সমুদ্রের বরফ গলে যাওয়ার ফলে স্থলভূমিতে এরা বেশি সময় ব্যয় করছে। ফলে আবর্জনা ঘেঁটে খাবার সন্ধান করতে এরা আরও বেশি করে প্লাস্টিক বর্জ্য খেয়ে ফেলছে। গবেষকদের মতে আর্কটিক অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের আবর্জনা ব্যবস্থাপনার নিরাপদ, দীর্ঘমেয়াদী উপায় খুঁজে বের করার উপর আরও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। আরও বেশি সতর্ক হতে হবে মানুষকে।

Image credit: Celia Kujala