জল রং, তেল রং, কাঠকয়লা অথবা পেনসিল ব্যবহার নেই। অথচ আঁকা হচ্ছে পোট্রেট! করে দেখাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ম্বোনগেনি বুথেলেজি। তাঁর চিত্রকর্মের মাধ্যম পরিত্যক্ত প্লাস্টিক। কুয়াজুলু নাটাল বলে একটি ছোট্ট গ্রামে বেড়ে ওঠা ৫৬ বছরের বুথেলেজি শৈশব থেকেই ভালবাসতেন শিল্পকর্ম করতে। মাটি দিয়ে গড়তেন গরু,ছাগল, ঘোড়া। কিন্তু গ্রামে গরু চরাতে গিয়ে দেখতেন, ছড়িয়ে আছে রাশি রাশি প্লাস্টিক। ধীরে ধীরে সেগুলি মিশছে পশুর খাদ্যে। বিষক্রিয়ায় মারা যাচ্ছে গবাদি পশু। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্লাস্টিক দূষণ প্রবল। ২০১৮-র একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, প্রায় ১০৭,৮০০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক মিশেছে সাগরের জলে। সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনকারী ২০টি দেশের মধ্যে নাম রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
২২ বছর বয়সি বুথেলেজি কপর্দকশূন্য অবস্থায় ভর্তি হলেন জোহানেসবার্গের একটি আর্ট কলেজে। রং কেনার পয়সা ছিল না হাতে। নানাবিধ কাজ করে যা পেতেন, বেরিয়ে যেত কলেজের মাইনে, ঘরভাড়ায় বেরিয়ে যেত সবই। তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবল বর্ণবিদ্বেষী সরকার। ফলে ‘কালা আদমি’ হয়ে ছবি এঁকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরিস্থিতি নেই বললেই চলে। কলেজের বাইরেই স্টুডিও-র কাছেই ময়লা ফেলার ভ্যাট। পড়ে আছে অসংখ্য প্লাস্টিক। নানারঙের, নানাকিসিমের। বুথেলেজি শুরু করলেন প্লাস্টিক কুড়োনো। তারপর হিট-গানের সাহায্যে গলিয়ে নিয়ে ক্যানভাসের উপর অসামান্য প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলতে থাকলেন তিনি। এভাবেই তৈরি হল তাঁর নিজস্ব চিত্রশৈলী। জার্মানি, ইজিপ্ট, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশে একাধিক কর্মশালা আর প্রদর্শনী। বুথেলেজির মতে, তাঁর ছবি আসলে সমাজের প্রতিফলন। বিশ্ব এখন মোকাবিলা করছে জলবায়ু সংকটের। বুথেলেজি নিজেও প্লাস্টিকদূষণ বিরোধী সংগ্রামের শরিক।