প্লুটোর বুকে হৃদয়ের আকার

প্লুটোর বুকে হৃদয়ের আকার

সৌরজগতের সবচেয়ে দূরের গ্রহ বা বলা যেতে পারে বামন গ্রহ হল প্লুটো। নাসার নিউ হরাইজ়নস মহাকাশযানের ক্যামেরায় প্লুটোর একটি ছবি ধরা পড়ে। তাতে দেখা গিয়েছে, গ্রহটির গায়ে একটি বড়ো অংশ জুড়ে সাদা রঙের ছোপ। যার আকৃতি হৃদয়ের মতো। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওই সাদা হৃদয় আসলে প্লুটোর মধ্যেকার বরফের স্তূপ। বর্তমানে প্লুটোর এই সবচেয়ে স্বীকৃত বৈশিষ্ট্যর নামকরণ করা হয়েছে টমবগ রেজিও। সেই হৃদয় আকার কীভাবে প্রথম ফুটে উঠল তা আজও রহস্যের জালে আবৃত। সম্প্রতি গবেষকরা বলছেন যে সেটি সম্ভবত বহু যুগ আগে ৪০০ মাইল চওড়া একটি মহাজাগতিক বস্তুর সাথে সংঘর্ষের কারণে ঘটেছে। বস্তুটির ১৫% শিলা দ্বারা গঠিত, এবং সেটি ৩০ ডিগ্রি কোণে তুলনামূলকভাবে কম গতিতে এসে প্লুটোকে আঘাত করে। নেচার অ্যাস্ট্রোনমিতে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে এই ঘটনাটি বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় নামকরণ করা হয়েছে “স্প্ল্যাট”। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যাডিন ডেন্টন বলেছেন যে প্লুটোর বুকে হৃৎপিণ্ড আকারের এই গঠন প্লুটোর ইতিহাসের প্রথম দিকের সময়কালে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ইঙ্গিত দেয়। গবেষণাটি প্লুটোর বুকে আঁকা এই হৃদয় আকৃতির পশ্চিম দিকের অংশ যা প্রায় ১০০০ মাইল-প্রশস্ত সেই অংশকে কেন্দ্র করে হয়। অঞ্চলটি অনেকটা জলের ফোটার আকৃতির যাকে স্পুটনিক প্ল্যানিটিয়া বলা হয়। এই অঞ্চলে বরফের ভাণ্ডার রয়েছে এবং প্লুটোর বাকি অংশের তুলনায় উচ্চতায় প্রায় ২.৫ মাইল ছোটো যা স্পষ্টতই একটি বিশাল সংঘর্ষের ফলাফল। গবেষকদের মতে যদিও প্লুটোর পৃষ্ঠের বিশাল অংশে জল-বরফের স্তরকে ঢেকে মিথেন বরফ এবং তার ডেরিভেটিভ রয়েছে, প্লানিটিয়া প্রধানত নাইট্রোজেন বরফে ভরা যা সম্ভবত নিম্ন উচ্চতার কারণে সেই সংঘর্ষের প্রভাবের পরে দ্রুত জমা হয়েছে। হৃদপিন্ডের আকৃতির পূর্ব দিকের অংশটি নাইট্রোজেন বরফের অনেক পাতলা স্তর দ্বারা আবৃত। টমবগ রেজিও-র এই অঞ্চলের উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছে তা আজও অস্পষ্ট, তবে এটি সম্ভবত স্পুটনিক প্লানিটিয়ার আকৃতি গঠনের প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত। বিজ্ঞানীদের মতে প্লুটোর অভ্যন্তর এতই ঠান্ডা যে শিলাগুলো বেশ শক্ত এবং আঘাতের তাপ সত্ত্বেও সেগুলো গলে যায়নি। আঘাতের কোণ এবং কম বেগের কারণে ইম্প্যাক্টরের ভিতরের অংশটি প্লুটোর অভ্যন্তরে ঢুকে যায়নি বরং অক্ষত ছিল।