প্ল্যাটিনাম-বসানো হীরের ন্যানো তার

প্ল্যাটিনাম-বসানো হীরের ন্যানো তার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ জুলাই, ২০২৫

প্ল্যাটিনাম ন্যানো-কণা বসানো হীরের ন্যানো তার উচ্চ তাপমাত্রায় সৌর-পর্দার (সোলার ব্লাইন্ড) আলো-শনাক্তকরণ প্রযুক্তিতে বিপ্লব এনে দিতে পারে। কারণ হীরের ন্যানো-তারের কর্মক্ষমতা অসাধারণ এবং তারা সুস্থায়ীও বটে। হীরে এক চমৎকার অতিপ্রশস্ত শক্তি-ব্যবধান যুক্ত অর্ধপরিবাহী পদার্থ, যা অতিবেগুনি আলো-শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, উচ্চ তাপমাত্রায় হীরের কর্মক্ষমতা এতদিন যথোপযুক্ত ছিল না। এর পৃষ্ঠের রাসায়নিক গঠনে অক্সিজেন পরমাণু সংযুক্ত থাকায় আলো থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত উৎপন্ন করার প্রতিক্রিয়া কমে যেত। এই সমস্যার সমাধান করেছে চীনের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক গবেষক দল, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ডংমিং সান। তাঁদের নতুন গবেষণায় নির্মিত প্ল্যাটিনাম ন্যানোপার্টিক্‌লে সমৃদ্ধ একক-কেলাস, হীরের তৈরি সূক্ষ্ম তারের কর্মক্ষমতা অসাধারণ রূপে বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই নতুন প্রযুক্তি-উপকরণটি ২২০ ন্যানোমিটার অতিবেগুনি আলোতে ঘরের তাপমাত্রায় ১/৬৮.৫ অ্যাম্পিয়ার-ওয়াট প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষমতা দেখিয়েছে। এটি প্রচলিত ‘অক্সিজেন-টার্মিনেটেড ডায়মন্ড ডিভাইসে’র তুলনায় প্রায় ২০০০ গুণ বেশি। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেওয়ার এই ক্ষমতা বেড়ে ২৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ১/৩০৯৮.৭ অ্যাম্পিয়ার-ওয়াট-এ পৌঁছেছে। এছাড়াও, এই সূক্ষ্ম তার অতিবেগুনি ও দৃশ্যমান আলোর মধ্যে চমৎকার বর্নালী-বাছাই করার ক্ষমতা দেখিয়েছে। এটি ঘরের তাপমাত্রায় ৫৫০ এবং ২৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দৃশ্যমান আলোকে ৪৩০৩ গুণ কম গুরুত্ব দিয়ে অতিবেগুনি রশ্মিকে শনাক্ত করে। উচ্চ তাপমাত্রাতেও ডিভাইসটি অত্যন্ত স্থিতিশীল এবং টানা ২৪ ঘণ্টা ২৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার পরও এর কর্মক্ষমতা অপরিবর্তিত ছিল। এমনকি তিন মাস পরিবেশে সংরক্ষণের পরও ডিভাইসটি কার্যকর ছিল।
এই প্ল্যাটিনাম-সমৃদ্ধ সূক্ষ্ম তার তৈরির জন্য চার ধাপের একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথমে হীরক ন্যানোওয়্যার প্রস্তুত করা হয়, তারপর প্ল্যাটিনাম দিয়ে স্তরায়িত করা হয়। এরপর তাপের মাধ্যমে পাতলা ধাতব স্তর ভেঙে সমানভাবে প্ল্যাটিনামের অতিক্ষুদ্র কণা তৈরি করা হয় এবং শেষে একই উপাদানের ওপর সেই উপাদানের স্তর সংযোগের মাধ্যমে এগুলোকে সূক্ষ্ম তারের ভেতরে আবদ্ধ করা হয়। এই সূক্ষ্ম তারগুলির অসাধারণ কর্মক্ষমতার কারণ একাধিক। যথা একমাত্রিক পরিবাহী পথ, হীরের গভীর-স্তরের ত্রুটি, প্ল্যাটিনাম কণার পৃষ্ঠে ইলেকট্রনের সম্মিলিত অনুরণন এবং হীরক-প্ল্যাটিনাম সংযোগস্থলের কার্যকর চার্জ বিভাজন। এগুলো মিলিতভাবে ডিভাইসের আলোক প্রতিক্রিয়া বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
এই প্রযুক্তির আরও উন্নয়ন ঘটলে অন্যান্য ধাতুর ক্ষুদ্র কণার ব্যবহার এবং নমনীয় ডিভাইসে সংযুক্ত করার মাধ্যমে এর প্রয়োগ আরও প্রসারিত হতে পারে।
সূত্র: “Single-Crystal Diamond Nanowires Embedded with Platinum Nanoparticles for High-Temperature Solar-Blind Photodetector” by Jiaqi Lu, Xinglai Zhang, Shun Feng, Bing Yang, Ming Huang, Yubin Guo, Lingyue Weng, Nan Huang, Lusheng Liu, Xin Jiang, Dongming Sun and Huiming Cheng, 16 April 2025, Nano-Micro Letters.
DOI: http://10.1007/s40820-025-01746-9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × one =