ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আঙুলের ছাপ শনাক্ত করতে পারবেন

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আঙুলের ছাপ শনাক্ত করতে পারবেন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ মার্চ, ২০২৪

দীর্ঘকাল যাবত ফরেনসিক তদন্তে ব্যক্তিগত শনাক্তকরণের জন্য আঙুলের ছাপ মূলত বিবেচনা করা হয়, বর্তমানেও অপরাধী ধরতে আঙুলের ছাপ এক বড়ো হাতিয়ার। কোনো বস্তুকে স্পর্শ করার পর ঘাম বা তেলের যে অদৃশ্য ছাপ পড়ে, তা হল আঙুলের সুপ্ত ছাপ(LFPs)। অদৃশ্য আঙ্গুলের ছাপ, বা লেটেন্ট ফিঙ্গার প্রিন্ট (LFPs) কে ভালোভাবে দৃশ্যমান করে তোলা ফরেনসিক বিজ্ঞানের এক মূল বিষয়।
সাংহাই নরমাল ইউনিভার্সিটি (চীন) এবং ইউনিভার্সিটি অফ বাথ (ইউরোপ) এর বিজ্ঞানীরা আঙুলের ছাপ ভালোভাবে শনাক্ত করতে নতুন ডাই স্প্রে তৈরি করেছেন। এই জলে-দ্রবণীয়, অবিষাক্ত ফ্লুরোসেন্ট স্প্রে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আঙুলের ছাপ ফুটিয়ে তুলে ফরেনসিক তদন্ত নিরাপদ, সহজ এবং দ্রুত করে তুলবে বলে তাদের আশা৷ আঙ্গুলের ছাপ সনাক্ত করার জন্য চিরাচরিত ফরেনসিক পদ্ধতিতে হয় বিষাক্ত পাউডার ব্যবহার করা হয় যা ডিএনএ সংক্রান্ত প্রমাণের ক্ষতি করতে পারে, বা পেট্রোকেমিক্যাল দ্রাবক ব্যবহৃত হয় যা পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকারক।
তারা দুটো ভিন্ন রঙের রঞ্জক তৈরি করেছেন, LFP-হলুদ এবং LFP-লাল। এই রঞ্জকদুটো আঙুলের ছাপে পাওয়া নেগেটিভ চার্জযুক্ত অণুর সাথে বেছে বেছে আবদ্ধ হয়। এই রঞ্জক অ্যামিনো অ্যাসিড বা ফ্যাটি অ্যাসিডের সাথে আবদ্ধ হয়। আবদ্ধ হওয়ার পরে নীল আলোর নীচে দেখা যায় রঞ্জকের অণুগুলো থেকে ফ্লুরোসেন্ট আভা নির্গত হয়, যা আঙুলের ছাপকে সহজেই দৃশ্যমান করে তোলে। এই রঞ্জক সবুজ ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিন (GFP) নামক জেলিফিশে পাওয়া একটি ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিনের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এটা নানা জৈবিক প্রক্রিয়া অধ্যয়নের জন্য গবেষকরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন। অর্থাৎ রঞ্জকগুলো জৈবিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফলে আঙুলের ছাপের ডিএনএ-র সাথে প্রতিক্রিয়া করে প্রমাণ নষ্ট করেনা। সূক্ষ্ম স্প্রে হওয়াতে চলকে পড়ে আঙুলের ছাপের ক্ষতি হয়না, আবার পাউডারের মতো ছড়িয়ে পড়ে অগোছালো হয়না। তাছাড়া রুক্ষ পৃষ্ঠতলেও যেখানে আঙুলের ছাপ শনাক্ত করা কঠিন যেমন ইট, সেখানেও এটা দ্রুত কাজ করে। গবেষকরা এটাও জানিয়েছেন যে এক সপ্তাহ পুরোনো আঙুলের ছাপও এই রঞ্জক দিয়ে শনাক্ত করা সম্ভব। তারা এই রঞ্জক ফরেনসিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির সাথে আলোচনা করছেন। এই গবেষণা আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 3 =