
গত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীদের নাকাল করে-চলা ‘ফাইনম্যান স্প্রিংক্লার সমস্যাটির সমাধান অবশেষে বেরিয়েছে। জানা গেছে যে একটি স্প্রিংক্লার জল নির্গত করার সময় উল্টো মুখে ঘোরে। এই আবিষ্কার ফ্লুইড মেকানিক্স সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও গভীর করেছে। নবীকরণযোগ্য শক্তির উন্নয়নেও এটি সহায়তা করতে পারে। কয়েক দশক ধরে নানান পরীক্ষার মাধ্যমে, গণিতবিদদের একটি দল আবিষ্কার করেছেন যে প্রবাহিত ফ্লুইড কীভাবে বল প্রয়োগ করে কাঠামোকে স্থানান্তরিত করে। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের কুরান্ট ইনস্টিটিউট অফ ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সেসের সহযোগী অধ্যাপক এবং গবেষণাপত্রের সিনিয়র লেখক লেইফ রিস্ট্রফ, ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস জার্নালে ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে ” আমাদের গবেষণাটি গবেষণাগারের পরীক্ষাগুলিকে গাণিতিক মডেলিংয়ের সাথে মিলিয়ে সমস্যাটির সমাধান করেছে । একটি বিপরীতমুখী স্প্রিংক্লার কীভাবে কাজ করে তার ব্যাখ্যা দিয়েছে এই মডেলিং”। বিপরীতমুখী স্প্রিংক্লার জল গ্রহণের সময় উলটো দিকে ঘোরে, যেমনটি ঘোরে জল বের করার সময়। এর কারণটি অতি সূক্ষ্ম এবং আশ্চর্যজনক। সাধারণ স্প্রিংক্লার রকেটের মতো জেটের মাধ্যমে নিজেকে চালিত করে । কিন্তু বিপরীতমুখী স্প্রিংক্লারটির আচরণ বেশ রহস্যজনক। কারণ এখানে যে জল শোষিত হচ্ছে তা একেবারেই জেটের মতো দেখায় না। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে স্প্রিংক্লারের ভিতরে প্রকৃতপক্ষে জেট রয়েছে, যাকে পর্যবেক্ষণ করে তার গতিকে ব্যাখ্যা করা যায়। এটাই তার গোপন রহস্য। কলোরাডো স্কুল অফ মাইনসের সহকারী অধ্যাপক এবং গবেষণাপত্রের সহ-লেখক ব্রেনান স্প্রিংক্ল উল্লেখ করেছেন, “কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে কাঠামোর মধ্য দিয়ে ফ্লুইড প্রবাহ যে গতি সৃষ্টি করতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের এখন আরও ভালো ধারণা হয়েছে । আমরা মনে করি আমাদের পরীক্ষায় ব্যবহৃত এই পদ্ধতিগুলি প্রবাহিত বাতাস বা জলের প্রতি সাড়াদায়ক ডিভাইসগুলির সাথে সম্পর্কিত অনেক ব্যবহারিক প্রয়োগের জন্য কার্যকর হবে।”
ফাইনম্যান স্প্রিংক্লার সমস্যাটি একটি ‘চিন্তা-পরীক্ষা’। এতে এক ধরণের বিশেষ ‘বাগান স্প্রিংক্লার’ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক কাঠামো তৈরি করা হয় । সাধারণ স্প্রিংক্লার ঘোরে, যখন জল প্রভৃতি তরল তার S-আকৃতির টিউব বা “বাহু” থেকে বের করে দেওয়া হয়। ফাইনম্যান স্প্রিংক্লারের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটি ওঠে যে যদি তরল/জল বাহু দিয়ে চুষে নেওয়া হয় তাহলে কী হবে। সে ক্ষেত্রে ডিভাইসটি কি ঘুরবে – ঘুরলে কোন দিকে এবং কেন ?সুদূর ১৮৮০-এর দশকে সমস্যাটি উত্থাপন করেছিলেন আর্নস্ট মাখ। সেই থেকে শুরু করে রিচার্ড ফাইনম্যান অবধি এটি নিয়ে কাজ চলেছে। ফাইনম্যান ১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত এটি নিয়ে গবেষণা করে সমস্যাটিকে জনপ্রিয় করেছিলেন। এটি অসংখ্য গবেষণার জন্ম দিয়েছে যা পদার্থবিদ্যার অনেক অন্তর্নিহিত বিষয় নিয়ে বিতর্ক তুলেছে।বিপরীত স্প্রিংক্লার প্রক্রিয়াটিকে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য, গবেষকরা জলে রঞ্জক এবং মাইক্রোকণা যোগ করেছেন, লেজার দিয়ে আলোকিত করেছেন এবং উচ্চ-গতির ক্যামেরা ব্যবহার করে প্রবাহগুলির গতিপথ বোঝার চেষ্টা করেছেন। দেখা গেছে যে প্রচলিত স্প্রিংক্লারের তুলনায় বিপরীত স্প্রিংক্লার অনেক ধীরে ঘোরে – প্রায় ৫০ গুণ ধীর – কিন্তু এর প্রক্রিয়াগুলি মৌলিকভাবে একই রকম। একটি প্রচলিত ফরোয়ার্ড স্প্রিংক্লার বাহু থেকে জল নিক্ষেপের মাধ্যমে চালিত রকেটের ঘুরন্ত সংস্করণের মতো কাজ করে। একটি বিপরীত স্প্রিংক্লার “Inside-Out রকেট” হিসাবে কাজ করে। গবেষকরা দেখেছেন যে দুটি অভ্যন্তরীণ জেট সংঘর্ষে লিপ্ত হয় কিন্তু ঠিক মুখোমুখি হয় না । তাঁদের গাণিতিক মডেল দেখিয়েছে যে কীভাবে এই সূক্ষ্ম প্রভাব এমন বল তৈরি করে যা স্প্রিংক্লারকে বিপরীত দিকে ঘোরায়। গবেষক দলটি এই অগ্রগতিকে জলবায়ু-বান্ধব শক্তির উৎস ব্যবহারের এক সম্ভাব্য পদ্ধতি হিসেবে দেখছেন।
সূত্র: “Centrifugal Flows Drive Reverse Rotation of Feynman’s Sprinkler” by Kaizhe Wang, Brennan Sprinkle, Mingxuan Zuo and Leif Ristroph, 26 January 2024, Physical Review Letters.
DOI: 10.1103/PhysRevLett.132.044003