ফার্ন বিবর্তনের পথে পিছিয়ে যেতে পারে

ফার্ন বিবর্তনের পথে পিছিয়ে যেতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

আমরা জানি প্রাণীর বিবর্তন হয়। বিবর্তিত হয়ে প্রাণীর রূপ পরিবর্তন হয়। আর প্রচলিত ধারণা হল বিবর্তনে সবসময় উন্নত প্রাণী তৈরি হয়। প্যালিওন্টোলজিকাল তত্ত্ব অর্থোজেনেসিস বা “প্রগতিশীল বিবর্তন”-এর ধারণা সমর্থন করে। অর্থাৎ প্রতি প্রজন্মের বংশধর আরও পরিশীলিত রূপের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু বিবর্তনের কোন শেষ নেই, এর কোনো চূড়ান্ত অবস্থা নেই। প্রাণী একটা নির্দিষ্ট ভূতাত্ত্বিক মুহুর্তে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বা কোনো শক্তিশালী নির্বাচন ছাড়াই কেবল প্রবাহের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়। ১৮৯৩ সালে, বেলজিয়ান জীবাশ্মবিদ লুই ডলো বলেন, একবার কোনো জীব একটা নির্দিষ্ট বিন্দুতে অগ্রসর হলে, আর সে আগের অবস্থায় ফিরে আসে না, এমনকি জীব যদি সেই আগের অভিজ্ঞতা, বা পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তাহলেও সে আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনা। ডলোর নিয়ম অনুযায়ী বিশেষীকরণ মূলত একমুখী রাস্তা, যেখানে জীবে নতুন জটিলতার স্তর জমা হয় যার ফলে পশ্চাদমুখী বিবর্তন প্রায় অসম্ভব।
বিবর্তন একমুখী এই ধারণার বিপরীতে পৃথিবীর প্রাচীনতম উদ্ভিদ – ফার্নের প্রজনন তন্ত্রে দু ধরনের প্রক্রিয়া দেখা গেছে। দেখা গেছে প্রজনন কৌশলগুলোর বিবর্তন দ্বিমুখীভাবে হয়েছে, যেখানে ফার্ন কখনও কখনও “অগ্রসর” থেকে কম বিশেষায়িত আকারে বিবর্তিত হয়েছে। ফার্নের একাধিক প্রজনন কৌশল রয়েছে। বেশিরভাগ প্রজাতিতে একটা পাতার ওপর স্পোর গঠিত হয় আর সেই পাতা সালোকসংশ্লেষণও করে, এই কৌশল মনোমর্ফিজম নামে পরিচিত। অন্য ক্ষেত্রে এক ধরনের পাতায় সালোকসংশ্লেষণ হয়, আর প্রজননের জন্য অন্য পাতা থাকে। এই কৌশল ডাইমর্ফিজম নামে পরিচিত।
তত্ত্ব অনুসারে, একবার ফার্নের ডাইমর্ফিজম বিকশিত হলে, এটা আর গতিপথ পরিবর্তন করে মনোমর্ফিজমের দিকে ফিরে যেতে পারে না। কিন্তু ফার্নে বিবর্তন অনুমান করার জন্য প্রাকৃতিক ইতিহাস সংগ্রহ এবং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে, এই প্যাটার্নের ব্যতিক্রম খুঁজে পাওয়া গেছে। চেন ফার্নে উন্নত ডাইমর্ফিজম দেখা যাওয়ার পরেও তারা সরল মনোমর্ফিজমে ফিরে গেছে। ফার্নের নমনীয় প্রজনন কৌশলের কারণ এদের বীজ, ফুল, ফল নেই। বীজ হল প্রজননের একটা অত্যন্ত বিশেষায়িত কাঠামো, যা পালটানো প্রায় অসম্ভব। কিন্তু জীবন্ত ফার্নের বীজ না থাকায়, তারা তাদের পাতায় স্পোর-উৎপাদনকারী কাঠামো রাখার স্থান পরিবর্তন করতে পারে। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী উদ্ভিদের সমস্ত বিশেষায়িত প্রজনন প্রক্রিয়া অপরিবর্তনীয় নয়। সময়ের সাথে সাথে বিশেষায়িত উদ্ভিদ কতগুলো স্তর অর্জন করেছে তার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তন হবে কিনা। যে সমস্ত জীব “একমুখী” পথে বিকশিত হয়েছে তাদের নতুন নির্বাচনের চাপে সাড়া দেওয়ার নমনীয়তার অভাব থাকতে পারে। তার জন্য তাদের পরিবর্তনের নতুন কৌশল বের করতে হবে। তাই ফার্নের মতো জীবে প্রজাতিগুলো বিশেষীকরণের পরেও “পিছিয়ে বিকশিত হওয়ার” ক্ষমতা রাখতে পারে। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, বিবর্তনের কোন “সঠিক” দিক নেই, শেষ লক্ষের দিকে তার কোনো যাত্রাপথ নেই।