ফিট থাকার চাবিকাঠি সম্পর্কে ভাবলে প্রথম যা মাথায় আসে তা হল দিনে বেশ খানিকটা সময় জিমে ব্যয় করা। কিন্তু সম্প্রতি কিছু ফিটনেস ইনফ্লুএন্সার দাবি করেন যে প্রতি ছয় থেকে আট সপ্তাহ কসরত করার পর প্রয়োজন এমন এক সপ্তাহ যার নামকরণ করা হয়েছে “ডিলোড উইক” আর এটিই স্বাস্থ্যোন্নতির আসল চাবিকাঠি। প্রশিক্ষণের গুরুভার যখন তীব্র তার মাঝে ডিলোড উইক এমন এক সপ্তাহ যে সময় কসরতের তীব্রতা কম থাকে। টানা অনেকদিন যাবৎ তীব্র প্রশিক্ষণের সময়কালে শরীর ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে পড়ে। এই সপ্তাহের লক্ষ্য হল বোঝা কমিয়ে শরীরকে ক্লান্তি এবং ক্ষয়ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধার করার জন্য শরীরকে সময় দেওয়া। তীব্র প্রশিক্ষণের ফলে আমাদের পেশির কলাতে ক্ষতি হয়। যদিও এই ক্ষতি স্বাস্থ্যের উন্নতি প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য অংশ, তবে এই উন্নতি তখনই ঘটতে পারে যখন কসরতের পর আমাদের শরীরের কলার পুনরুদ্ধারের সময় থাকে। ব্যায়ামের সময় আমাদের পেশি অল্পস্বল্প ছিঁড়ে যেতে পারে বা পেশি তন্তু অসংগঠিত হয়ে পড়তে পারে। ফলে পেশি কলায় প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। বিশ্রাম নিলে বা হালকা ব্যায়াম করলে তা নিরাময় সম্ভব। আসলে এই প্রদাহ আমাদের পেশিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ – যা ফিটনেসের উন্নতির দিকে পরিচালিত করে। কিন্তু আমরা যদি পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়াই কসরত করে চলি তবে আমাদের পেশি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রদাহ দূর হয় না, আবার নেতিবাচক পরিবর্তনও ঘটতে পারে যেমন আমাদের পেশি ঠিকমতো অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারে না, তার কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। পেশিকে পুনরুদ্ধারের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা তাদের উন্নত করতে পারি। কসরতে আগ্রহী অনেক ব্যক্তিরা জিম থেকে বিরতি নিতে ভয় পায়, মনে করে তাদের শারীরিক উন্নতির ক্ষতি হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গবেষণা দেখায় যে আমাদের পেশির জিন একটি স্মৃতির ছাপ ধারণ করে। অর্থাৎ আমাদের পেশি ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণের জন্য দ্রুত এবং আরও ভালোভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে এবং বিশ্রামের পরে তার বৃদ্ধি ঘটে। এমনকি প্রায় সাত সপ্তাহ পর্যন্ত ডিলোডেড অবস্থায় থাকার পরেও, আমাদের পেশির কার্যক্ষমতা আবার প্রাথমিক অবস্থায় পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে, বা তার বেশিও করা যেতে পারে এবং দ্বিগুণ দ্রুততার সাথে। তাছাড়া তীব্র প্রশিক্ষণের পর বিশ্রাম প্রয়োজন নাহলে পেশিতে ব্যথা হতে পারে যাকে বলা হয় ওভারট্রেনিং সিন্ড্রোম। ওভারট্রেনিং সিন্ড্রোমের লক্ষণগুলো হল ক্লান্তি, দুর্বল কর্মক্ষমতা এবং মেজাজের ব্যাঘাত। এই উপসর্গ ধীরে ধীরে দেখা দেয়। এই কারণেই পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে ওভারট্রেনিং সিন্ড্রোম কতটা সাধারণ তা বলা কঠিন, এর লক্ষণও অস্পষ্ট। কিছু গবেষণা জানায় যে সব ক্রীড়াবিদরা একটি নির্দিষ্ট খেলায় পারফরম্যান্সের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছেন তাদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব ১০% হলেও প্রতিযোগিতামূলক ক্রীড়াবিদদের ৬০% এই সিন্ড্রোম দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। সুতরাং, এটা স্পষ্ট যে সুস্থতা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই পুনরুদ্ধারের সময় গুরুত্বপূর্ণ। নিজের শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী ডিলোড উইকের সময়সূচী পরিকল্পনা করা উচিত। কোন প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা এত কঠিনভাবে করা উচিত নয় যে শরীর না দিলে বা উন্নতি না হলে একধাপ পিছিয়ে যাওয়া যাবে না। ডিলোড উইক কেবল নিজের কর্মক্ষমতাই নয়, নিজের স্বাস্থ্যের জন্যও জরুরি।