অনেক সময় ফুসফুসে বাসা বাঁধে টিউমার। রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, গলায় কফ জমে, শ্লেষ্মার সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসে, প্রচণ্ড কাশিতে বুকে ব্যথা হয়। ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিত্সা করা একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ। ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রচলিত কেমোথেরাপি এক্ষেত্রে অনেকসময় কাজ করেনা। এক নতুন গবেষণায় গবেষকরা একটি বায়োহাইব্রিড মাইক্রোরোবট তৈরি করেছেন যা প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম উভয় উপাদান দিয়ে তৈরি একটি ক্ষুদ্র বস্তু, যার মাধ্যমে ওষুধ নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছনো যেতে পারে। এই বায়োহাইব্রিড মাইক্রোরোবটটি একটি সবুজ আণুবীক্ষণিক শৈবাল বা মাইক্রোঅ্যালগি যা সরাসরি ফুসফুসে কেমোথেরাপি সরবরাহ করতে পারে এবং ফুসফুসের মেটাস্টেসের চিকিৎসা করতে পারে। সিন্থেটিক মাইক্রোরোবট সাধারণত শক্ত ধাতব বা পলিমেরিক কাঠামো দিয়ে গঠিত যা তৈরি করা কঠিন। তারা নির্দিষ্ট অঙ্গ এবং কলাতে পৌঁছতে পারে না, এবং অনেক ক্ষেত্রে মানুষের জন্য বিষাক্তও হতে পারে। মাইক্রোঅ্যালগি এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছে। মাইক্রোঅ্যালগি ফুসফুসের ভিতরে নিজে নিজে চলাফেরা করে ফ্ল্যাজেলা নামের একটি চুলের মতো অঙ্গ ব্যবহার করে। অন্যান্য আণুবীক্ষণিক জীবের তুলনায় এরা কম বিষাক্ত। এদের উত্পাদন করা সহজ ও ব্যয়বহুলও নয়। এই বায়োহাইব্রিড মাইক্রোরোবট– যা অ্যালগি-NP(DOX)-রোবট নামে পরিচিত– অণুবীক্ষণিক, জীবন্ত সবুজ মাইক্রোঅ্যালগি যা সাধারণত ফার্মাসিউটিক্যালসে ব্যবহৃত হয়, যেমন- ক্ল্যামাইডোমোনাস রেইনহার্ডটি এবং লোহিত রক্তকণিকার ঝিল্লির সাথে সংযুক্ত ন্যানোপার্টিকেল দ্বারা গঠিত। কোশের ঝিল্লি একটি প্রাকৃতিক “ছদ্মবেশ” হিসাবে কাজ করে যাতে রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এদের আক্রমণ করতে না পারে। ন্যানো পার্টিকেলের মধ্যে ডক্সোরুবিসিন নামের একটি সাধারণ কেমোথেরাপির ওষুধ যুক্ত থাকে। গবেষকরা শেওলা-ভিত্তিক মাইক্রোরোবটগুলো নিয়ে ইঁদুরের ফুসফুসে পরীক্ষা করেন। শ্বাসনালীর মাধ্যমে এই শৈবাল-ভিত্তিক মাইক্রোরোবটের মাধ্যমে সরাসরি ফুসফুসে ওষুধ পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। ফুসফুসে পৌঁছে এই মাইক্রোরোবট সাঁতার কাটে ফুসফুসের কলায় ওষুধ বিতরণ করতে পারে। গবেষকরা মনে করেন যে বায়োহাইব্রিড মাইক্রোরোবট ফুসফুসের রোগের চিকিত্সার জন্য এবং ফুসফুসে ওষুধ সরবরাহ করার জন্য একটি শক্তিশালী পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত হবে।