বঙ্গোপসাগরের ধরন পাল্টাচ্ছে?

বঙ্গোপসাগরের ধরন পাল্টাচ্ছে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

 

বঙ্গোপসাগরে নাকি সমুদ্রস্রোতের ধরন পালটে গেছে! আধুনিক সমুদ্রবিজ্ঞানের একটা মূল নীতি হল সমুদ্র স্রোত উত্তর গোলার্ধে বাতাসের ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বিচ্যুত হয়। পৃথিবীতে সমুদ্রপৃষ্ঠের স্রোত পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি দ্বারা প্রভাবিত। ১৯০৫ সালে সুইডিশ সমুদ্রবিজ্ঞানী ভ্যাগন ওয়ালফ্রিড একম্যান প্রবর্তিত এই নীতিটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। NOAA-এর প্যাসিফিক মেরিন এনভায়রনমেন্টাল ল্যাবরেটরি (PMEL) এর নেতৃত্বে সাম্প্রতিক গবেষণায় এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। বঙ্গোপসাগরে, দীর্ঘমেয়াদীভাবে মুরড বয়া থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র পৃষ্ঠের স্রোত বাতাসের বাম দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত হওয়ার জন্য স্রোত ডানদিকে বয়ে যাওয়ার কথা। প্রতিষ্ঠিত মডেল থেকে এটা অপ্রত্যাশিত বিচ্যুতি। এই গবেষণা সায়েন্স অ্যাডভান্স – এ প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা অবস্থিত। মৌসুমী বায়ু থেকে বর্ষার ফলে এই স্থান বিশ্বব্যাপী শিপিং, মৎস্যসম্পদ, বিভিন্ন সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এর অনন্য ভৌগোলিক অবস্থান আঞ্চলিক জলবায়ুকে প্রভাবিত করে, দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে কৃষি এবং আবহাওয়ার জন্য এই অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণাপত্রে, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশান ইনফরমেশন সার্ভিসেস, কেরালা ইউনিভার্সিটি অফ ফিশারিজ অ্যান্ড ওশান স্টাডিজ এবং জাগরেব ইউনিভার্সিটি, জিওফিজিক্স বিভাগের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় বঙ্গোপসাগরে জলের পৃষ্ঠপ্রবাহ বর্ণনা করেছেন। ভারতের পূর্ব উপকূল থেকে কয়েকশ মাইল দূরে একটা বয়ার প্রতি ঘণ্টার একাধিক বছরের তথ্য একত্রিত করে তাঁরা এই গবেষণা করেছেন। এই অনুসন্ধান সময়োপযোগী, এই জ্ঞান প্রস্তাবিত নতুন নাসা স্যাটেলাইট মিশনের পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণে সহায়তা করতে পারে। এই মিশনে একই সাথে বিশ্ব মহাসাগরের ওপর উচ্চ রেজোলিউশনে পৃষ্ঠের বায়ু এবং সমুদ্রের স্রোত পরিমাপ করা হবে, যা ওশান ডায়নামিক্স এবং সারফেস এক্সচেঞ্জ উইথ দ্য অ্যাটমোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। এই গবেষণায় বর্ণিত সমুদ্রের প্রবাহ উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিযুক্ত স্যাটেলাইট থেকে বোঝা যাবে, বিশেষত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে যেখানে সমুদ্রস্রোত সঞ্চালনের ওপর পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাব তুলনামূলকভাবে দুর্বল।
পিএমইএল-এর বিজ্ঞানী ও প্রধান গবেষক মাইকেল ম্যাকফ্যাডেনের মতে, এই আবিষ্কারের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এটি আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা, সামুদ্রিক জৈব-রাসায়নিক চক্র, বাস্তুতন্ত্রের আচরণ এবং মৎস্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen + 9 =