বড়ো স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিলুপ্তির জন্য দায়ী ছিল মানুষ

বড়ো স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিলুপ্তির জন্য দায়ী ছিল মানুষ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ জুলাই, ২০২৪
বড়ো স্তন্যপায়ী প্রাণী

বিতর্ক চলছে বেশ কয়েক দশক ধরে: মানুষ নাকি জলবায়ু পরিবর্তন- কে আসামী? কার হস্তক্ষেপের কারণে বিগত ৫০,০০০ বছরে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এবং সরীসৃপের অনেক প্রজাতি? বড়ো স্তন্যপায়ী প্রাণী বলতে সেই সব প্রাণীদের বোঝায় যাদের ওজন কমপক্ষে ৪৫ কিলোগ্রাম, বিজ্ঞানের ভাষায় এরা মেগাফনা বলে পরিচিত। এ পর্যন্ত পাওয়া দেহাবশেষের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে ওই সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ১৬১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে। প্রাণীদের মধ্যে যারা আকারে সবচেয়ে বড়ো অর্থাৎ যাদের ওজন এক টনের বেশি তাদের সংখ্যা বেশি হ্রাস পেয়েছে। এই প্রাণীদের বসবাস স্থল্ভূমিতে ও তারা তৃণভোজী। এদের বলা হয় মেগাহার্বিভোরস। পঞ্চাশ হাজার বছর আগে, ৫৭টি প্রজাতির মেগাহার্বিভোর ছিল। আজ, সেখানে মাত্র ১১টি প্রজাতি অবশিষ্ট রয়েছে। এই অবশিষ্ট ১১টি প্রজাতিরও জনসংখ্যা খুব তাড়তাড়ি হ্রাস পাচ্ছে। আরহাস ইউনিভার্সিটির এক দল গবেষক এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে এই বিলুপ্ত প্রজাতির অনেকাংশই মানুষের জন্য বিলুপ্তির পথে এগিয়েছে। বরফ যুগ ও তার মধ্যবর্তী সময়কালে অর্থাৎ প্লেইস্টোসিন সময়ে যে নাটকীয়ভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে তা বিশ্বব্যাপী বৃহৎ এবং ছোটো প্রাণী এবং উদ্ভিদ উভয়ের জনসংখ্যা এবং বিতরণকে প্রভাবিত করে। তবে ঘটনাচক্রে বিলুপ্তি শুধুমাত্র বড়ো প্রাণীদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে, বিশেষ করে সবচেয়ে বড়ো প্রাণীদের মধ্যে। তবে গবেষকদের মতে মানুষ এইসব প্রাণীদের ক্ষেত্রে হুমকির কারণ ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা খুব বড়ো প্রাণীদের ধরার জন্য প্রাচীন ফাঁদ খুঁজে পেয়েছেন। তাছাড়াও বর্শার কোণে লেগে থাকা প্রোটিনের অবশিষ্টাংশ ও প্রাচীন মানুষের হাড়ের আইসোটোপ বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে যে প্রাচীন যুগে মানুষ বড়ো বড়ো স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করে খেত। গবেষকদের বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে ম্যামথ, মাস্টোডন এবং দৈত্যাকার স্লথের মতো বৃহৎ প্রাণীদের শিকার বিশ্বজুড়ে ব্যাপক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। আরও জানা যায় যে প্রজাতিগুলো বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন হারে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিছু স্থানীয় অঞ্চলে, এটি খুব দ্রুত ঘটেছিল, এবং অন্যান্য জায়গায় এটি ১০,০০০ বছরেরও বেশি সময় নেয়। কিন্তু সর্বত্রই, আধুনিক মানুষের আগমনের পরে এই ঘটনা ঘটে বা আফ্রিকার ক্ষেত্রে, মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক অগ্রগতির পরে এটি ঘটেছে। গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে মেগাফনার এই হ্রাস পরিবেশে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বড়ো প্রাণীরা গাছপালার গঠনকে প্রভাবিত করে বাস্তুতন্ত্রে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে যেমন, ঘন বন এবং খোলা এলাকার মধ্যে ভারসাম্য, বীজ বিচ্ছুরণ এবং পুষ্টির চক্র চালানো। তাদের অন্তর্ধানের ফলে বাস্তুতন্ত্রের কাঠামো এবং কার্যাবলীতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে।