
চিড়িয়াখানার বন্দি জীবন নিয়ে আমরা যেমন কমবেশি সবাই কৌতূহলী , তেমনি বনে এবং চিড়িয়াখানায় থাকা ওরাংওটাঙরাও বিশ্বকে নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে অন্বেষণ চালায়। আরও কৌতূহলের বিষয় হল, এরা বনের তুলনায় চিড়িয়াখানায় আরও বৈচিত্র্যময় উপায়ে বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে ঘনঘন প্রকৃতিকে নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। তরুণ ও বৃদ্ধ উভয় ওরাংওটাঙরা প্রায় একই সময় বিভিন্ন পদ্ধ্বতি ব্যবহার করে থাকে, এদের মধ্যে চিড়িয়াখানায় যারা সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে তারা অনেক বেশি এবং বারবার করে তাদের অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যায়। আবার যারা বন্য নয় তার তাদের বেঁচে থাকার তাগিদে এই নিয়ে বেশি অনুসন্ধান করতে পারে না । পরিবেশ শুধু মানুষের বিকাশকেই নয়, আমাদের নিকটবর্তী সব জীবদের আচরণ ও জ্ঞানকেই প্রভাবিত করে। বনে এবং চিড়িয়াখানায় থাকা সুমাত্রান ওরাংওটাঙদের তুলনা করে একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যায় যে চিড়িয়াখানার জীবন ওরাংওটাঙদের পরিবেশের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে দেয়। গবেষকরা দৈনিক অনুসন্ধানমূলক বস্তুর হেরফের(ই ও এম) -এর ১২০০০টিরও বেশি ঘটনা বিশ্লেষণ করে সক্রিয় হস্তক্ষেপ ও চাক্ষুষ পরিদর্শনের মাধ্যমে দেখেন ০.৫ থেকে ৭৬ বছর বয়সী ৫১টি ওরাংওটাঙের শেখা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অসুবিধা রয়েছে। এই অনুসন্ধানটি বিভিন্ন বয়সের বিস্তর পরিসরে বনে ও চিড়িয়াখানায়ে থাকা ওরাংওটাঙদের ইওএম আচরণের তুলনা করেছে। ইন্দোনেশিয়ার সুক বালিম্বিং গবেষণামূলক সাইটে ৬ মাস থেকে ৭৬ বছর বয়সী ৩৩জন এবং জার্মানি ও সুইজ্যারল্যান্ডের ৪টি চিড়িয়াখানার ৭মাস থেকে ৪৯ বছর বয়সী ২৪ জনের থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। বিভিন্ন অনুসন্ধান থেকে আমরা দেখতে পাই যে, যেসব ওরাংওটাঙরা চিড়িয়াখানায় থাকে তারা তাদের বন্য সহযোগীদের তুলনায় বারবার, জটিলভাবে ও বৈচিত্র্যময় ভাবে প্রকৃতিকে নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যায়। এই গবেষণার প্রথম লেখক ইসাবেল লামার বলেছেন, “ আমাদের গবেষণা থেকে যায় যে চিড়িয়াখানার ওরাংওটাঙরা কেবল বেশি অন্বেষণই করে না, তারা ভিন্নভাবেও অন্বেষণ করে।” এক্ষেত্রে বিশেষ আকর্ষণ হল কোনো একটা নির্দিষ্ট জিনিস খোঁজার ক্ষেত্রেও চিড়িয়াখানায় থাকা ওরাংওটাঙরা তাদের সমৃদ্ধতার পরিচয় দেয়। তারা স্বভাবত একই সময়ে হাতে তৈরি একাধিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে।
বন্য ওরাংওটাঙরা যেখানে প্রাথমিকভাবে গাছ,ছাল-বাকল এবং লাঠির মতো প্রকৃতিজাত জিনিসের খোঁজ করে, সেখানে চিড়িয়াখানার ওরাংওটাঙরা আরও উন্নত জিনিসের খোঁজে থাকে যেমন প্লাস্টিকের খেলনা, ধাঁধা এবং তাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে এরকম প্রচুর জিনিস । যে বয়সে ওরাংওটাঙরা অনুসন্ধান করা শিখেছিল সেটা দুই ক্ষেত্রেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, যা কিনা সহজাত বিকাশের ইঙ্গিত দেয়।
একটি মানবশিশুর ক্ষেত্রে বস্তু অন্বেষণের জন্য জ্ঞান ও স্নায়বিক বিকাশকে উদ্দীপিত করার জন্য শরীরের গঠন ও ওজনের মতো শারীরিক বৈশিষ্ট্যকেই গুরুত্ব দেওয়া হয় ।অনেক অ-মানব প্রাণীর ক্ষেত্রেও এই নিদর্ষন দেখা যায় । উচ্চতর অন্বেষণের প্রতি ঝোঁক চিড়িয়াখানার ওরাংওটাঙদের জ্ঞানের নমনীয়তা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়াতে পারে, কারণ তারা উন্নত জিনিসের সাথে সবসময় সংযুক্ত থাকে এবং এর থেকেও শেখার চেষ্টা করে। গবেষণার বরিষ্ঠ লেখক ক্যারলিন শুপ্লি বলেছিলেন, পরিবেশে প্রাণীদের আচরণ্ ও জ্ঞানের বিকাশকে প্রভাবিত করে এই ফলাফলগুলি। এর ফলে বন্য প্রাণী ও চিড়িয়াখানার প্রাণীদের তুলনা করে এবং আমাদের একটি প্রজাতির প্রাণীর জ্ঞানের সম্পূর্ন সীমা সম্পর্কে জানার অনন্য সুযোগ পাওয়া যায়।