বন্যপ্রাণী পাচার সারা বিশ্বের ৪০০০ প্রজাতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে

বন্যপ্রাণী পাচার সারা বিশ্বের ৪০০০ প্রজাতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ জুন, ২০২৪

সাম্প্রতিক ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীরা বন্যপ্রাণী চোরাকারবারি ব্যবসার শিকার। অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী পাচার মোকাবেলায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, অনেক বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব আজ সংকটে। বন্যপ্রাণী পাচারের অপরাধ যে শুধু প্রকৃতির ক্ষতি করে তা নয়, বরং জীবিকা, জনস্বাস্থ্য, সুশাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের গ্রহের ক্ষমতাকেও বিপন্ন করে।
মাদক ও অপরাধ সংক্রান্ত জাতিসংঘের কার্যালয় (UNODC)-এর রিপোর্টটি ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১৬২টি দেশ ও অঞ্চলে বন্যপ্রাণী আটকের ১৪০,০০০-এরও বেশি রেকর্ড থেকে সংকলিত হয়েছে। যদিও গণ্ডার এবং হাতির মতো কিছু প্রাণীদের পাচার হ্রাস পেয়েছে তবে এরা সম্ভবত বিপন্ন প্রজাতির তালিকাভুক্ত। প্রায় ৩২৫০টি প্রজাতির প্রাণী বিপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কনভেনশনে তালিকাভুক্ত। রেকর্ড অনুসারে প্রাণীদের মধ্যে প্রায় ১৬% কোরাল পাচার করা হয়, ৯% কুমীর জাতীয় প্রাণী এবং ৬% হাতি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে বন্যপ্রাণী বা উদ্ভিদ পাচারের কারণে স্থানীয় বা বিশ্বব্যাপী কিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে যেমন বেশ কিছু বিরল অর্কিড, এবং সরীসৃপ। এই প্রজাতিগুলো খুব কমই জনসাধারণের মনোযোগ আকর্ষণ করে। গবেষণা অনুসারে বন্যপ্রাণী পাচারের প্রকৃত মাত্রা, নথিভুক্ত পাচারের সংখ্যার থেকে অনেক বেশি। দুর্নীতির কারণে চোরাকারবার নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন আবার অন্যদিকে প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী বাজারে পৌঁছানোর জন্য পাচারকারীদের ক্ষমতাকে ত্বরান্বিত করে তুলেছে। তাই অতি দুশ্চিন্তার খবর হল, ইদানীং বন্যপ্রাণ চোরাকারবারিরা ইন্টারনেটে শতাধিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বেআইনি ব্যবসা দিন-দিন বাড়িয়ে চলেছে। কোভিড-১৯ রুখতে সারা দেশে যখন লকডাউন চলছিল, তখন বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ যথেষ্ট ব্যাহত হয়েছিল। সেই সময় চোরাশিকারের ঘটনা ৩৫ থেকে বেড়ে ৮৮% হয়েছে। অন্যদিকে ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে যে, লকডাউনে যত চোরাশিকার হয়েছে, তার ৪৪% খুরযুক্ত প্রাণী। এদের পরেই হয়েছে বানর, প্যাঙ্গোলিন, বড়ো কাঠবিড়াল, ভাম, খরগোশ, ছোটো বনবিড়াল ও শজারু-র চোরাশিকার। এ সব প্রাণীর চোরাশিকার প্রাক্-লকডাউন কালের ১৭% থেকে বেড়ে লকডাউনে ২৫% হয়েছিল। সুতরাং এ বিষয়ে আরও গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানানো হয়েছে, কারণ এই অবৈধ বন্যপ্রাণীর ব্যবসা সংক্রান্ত অনেক বিষয় আজও অস্পষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 9 =