বয়ঃসন্ধিকাল, মস্তিষ্কচালনা ও ঘুম

বয়ঃসন্ধিকাল, মস্তিষ্কচালনা ও ঘুম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ মে, ২০২৫

যেসব কিশোর-কিশোরী অন্যদের সাপেক্ষে বেশি ঘুমোয় তারা বোধবুদ্ধির পরীক্ষায় ভালো ফল করে, তাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়া অপেক্ষাকৃত জোরালো হয়। ব্রিটেন আর চীনের গবেষকরা যৌথভাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কিশোর-কিশোরীদের সমীক্ষা করে এই ফল জানিয়েছেন। চিন্তার বিষয় হল, যাদের নিদ্রাভ্যাস মোটের উপর স্বাস্থ্যকর, তারাও কিন্তু নিজ বয়স-বর্গের পক্ষে উপযুক্ত পরিমাণ ঘুমোয় না। উপযুক্ত পরিমাণ ঘুম শুধু বোধবুদ্ধিকে নয়, রোগ প্রতিরোধ আর মানসিক স্বাস্থ্যকেও মদত দেয়। আমেরিকান একাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিন অনুসারে, আদর্শ ঘুমের দৈর্ঘ্য হওয়া উচিত দিনে আট থেকে দশ ঘন্টা।

এই গবেষণার অংশ হিসেবে, ১১-১২ বছর বয়সী ৩,২০০ জনেরও বেশি কিশোর-কিশোরীকে পরীক্ষা করা হয়। দলটি ১৩-১৪ বছর বয়সীদের আরও দুটি দলের সাপেক্ষে তাঁদের ফলাফল দুবার করে পরীক্ষা করেন। এই দুদলের মোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১১৯০ জন। গবেষকরা দেখেন, এই তিনটি দলের মধ্যে ফলাফলগুলি স্পষ্টচিহ্ণিত। প্রথম দলের প্রায় ৩৯% অংশগ্রহণকারী গড়ে ৭ ঘন্টা ১০ মিনিট ঘুমিয়েছে। দ্বিতীয় দলের ক্ষেত্রে, অংশগ্রহণকারীদের ২৪%, গড়ে ৭ ঘন্টা ২১ মিনিট ঘুমায়। ঘুমের সমস্ত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে তাদের গড় মাত্রা বেশি ছিল। তৃতীয় দলে, ৩৭% অংশগ্রহণকারী গড়ে ৭ ঘন্টা ২৫ মিনিট ঘুমায়। তারা শুতে যেতো তাড়াতাড়ি এবং তাড়াতাড়ি গভীর ঘুমে ঢলে পড়ত। ঘুমের সময় তাদের হৃদস্পন্দনও কম ছিল। গবেষকরা দলগুলির মধ্যে স্কুলের পরীক্ষার ফলাফলের ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য খুঁজে পাননি। তবে শব্দভাণ্ডার, পড়া, সমস্যা সমাধান এবং মনোযোগের মতো দিকগুলি বিবেচনা করে বোধবুদ্ধি পরীক্ষার ক্ষেত্রে, তৃতীয় দলটি দ্বিতীয় দলের তুলনায় ভালো ফল করে। লক্ষ্য করা যায়, তৃতীয় দলের মস্তিষ্কের আয়তন সবচেয়ে বেশি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সবচেয়ে ভালো। প্রথম দলের মস্তিস্ক সবচেয়ে কম আয়তনের এবং তাদের কার্যকারিতাও সবচেয়ে কম। ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গবেষক ডঃ কিং মা বলেন: ” আমাদের গবেষণা দ্বারা তরুণদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ভালো এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করার ক্ষমতা আছে কিনা তা অবশ্য চূড়ান্তভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ, এই ধারণাকে সমর্থনের জন্য আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন। যেমন, স্মৃতিশক্তির উপর ঘুমের উপকারিতা দেখানো হলেও, বিশেষ করে স্মৃতিশক্তি সংহত করার ব্যাপারে ‘শেখা’র গুরুত্বকেও প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন”। গবেষকরা আরও দেখেন, ঘুমন্ত অবস্থায় তৃতীয় দলের হৃদস্পন্দনের হার ছিল সবচেয়ে কম এবং প্রথম দলের হৃদস্পন্দনের হার সবচেয়ে বেশি। কম হৃদস্পন্দন সাধারণত ভালো স্বাস্থ্যের লক্ষণ। স্পন্দনের উচ্চ হার প্রায়শই খারাপ ঘুমের সাথেই জড়িত, যেমন অগভীর ঘুম, ঘন ঘন জেগে ওঠা এবং দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুমানো। ডঃ ওয়েই চেং আরও বলেন, “এবার আমাদের দেখতে হবে কেন কিছু তরুণ-তরুণী দেরিতে ঘুমাতে যায় এবং অন্যদের তুলনায় কেনই বা তারা কম ঘুমায়। ভিডিও গেম খেলা বা স্মার্টফোন দেখার কারণেই কি এমনটা হয়? নাকি তাদের শারীরিক ঘড়িই ঘুমানোর সময় নিরূপণে ব্যর্থ ?” কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বারবারা সাহাকিয়ান জানান, ” প্রাপ্তবয়স্ক এবং অষ্টাদশ-উত্তীর্ণদের ঘুম সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয়ে আমরা ওয়াকিবহাল হলেও, এতকাল বয়ঃসন্ধিকালের ঘুম সম্পর্কে আমরা আশ্চর্যজনকভাবে খুব কমই জানতাম। … তরুণরা কতক্ষণ ঘুমায় এবং এটি তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং বোধবুদ্ধিগত কর্মক্ষমতার উপর কী প্রভাব ফেলে, তা জানা জরুরী”।

সূত্র: “Neural correlates of device-based sleep characteristics in adolescents” by Qing Ma, Barbara J. Sahakian, Bei Zhang, Zeyu Li, Jin-Tai Yu, Fei Li, Jianfeng Feng and Wei Cheng, 16 April 2025, Cell Reports.

DOI: 10.1016/j.celrep.2025.115565

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + 1 =