বয়সজনিত দৃষ্টিক্ষীণতার উপশম

বয়সজনিত দৃষ্টিক্ষীণতার উপশম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ অক্টোবর, ২০২৫

বয়স বাড়ার সাথে সাথে দৃষ্টিশক্তি আবছা হয়ে যাওয়া বা কাছের বস্তুকে অস্পষ্ট দেখাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলে প্রেসবায়োপিয়া। সাধারণত চোখ দেখিয়ে চোখের পাওয়ার মাপিয়ে চশমা পড়া বা তাতেও সমাধা না হলে জটিল কোনো সার্জারির আশ্রয় নিতে হয়। তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষভাবে প্রস্তুত একরকম চোখের ড্রপ দিনে কয়েকবার ব্যবহার করলে এক ঘণ্টার মধ্যেই দৃষ্টি অনেকটাই স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। একদম যেন তরুণ বয়সের মতো ঝকঝকে দৃষ্টি। এই ফলাফল প্রায় দুই বছর অব্দিও স্থায়ী থাকে।
ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব ক্যাটারাক্ট অ্যান্ড রিফ্র্যাকটিভ সার্জনসের ৪৩তম সম্মেলনে আর্জেন্টিনার গবেষক ডা. জিওভান্না বেনোজ্জি এই ফলাফল তুলে ধরেন। গবেষণাটি চলেছিল ৭৬৬ জন রোগীর উপর, যাদের গড় বয়স ছিল ৫৫ বছর। এই বিশেষ ড্রপটি ব্যবহার করার পর অধিকাংশ রোগী জেগার চার্টে দুই থেকে তিন লাইন বেশি পড়তে সক্ষম হন, এই প্রভাব প্রায় দুই বছর বজায় থাকে।
এই ড্রপে দুটি সক্রিয় উপাদান রয়েছে— ১)পাইলোকার্পিন- যা চোখের মণি সংকুচিত করে এবং সিলিয়ারি পেশিকে সক্রিয় করে ফোকাস উন্নত করে।
২)ডাইক্লোফেনাক- একটি স্টেরয়েড বর্জিত প্রদাহরোধী ওষুধ, যা প্রদাহ কমায় ও পাইলোকার্পিনের কারণে হওয়া অস্বস্তি হ্রাস করে।
গবেষণা চলাকালীন রোগীরা দিনে দু’বার, সকালে ও ছয় ঘণ্টা পর আবার, প্রয়োজনে তৃতীয়বার ড্রপ ব্যবহার করেছেন। পরীক্ষায় তিন ধরনের ড্রপ ব্যবহৃত হয়—১%, ২% এবং ৩% পাইলোকার্পিনের ঘনত্বে। মাত্র এক ঘণ্টায় রোগীরা গড়ে ৩.৪৫ জেগার লাইন বেশি পড়তে পারেন। ১% ঘনত্বের গ্রুপে ৯৯% রোগী স্পষ্টভাবে পড়তে সক্ষম হন।২% গ্রুপে ৬৯% এবং ৩% গ্রুপে ৮৪% রোগী তিন লাইন বা তার বেশি পড়তে পারেন। দেখা গেছে,তাদের দৃস্টিশক্তির উন্নতির গড় স্থায়িত্বকাল ছিল প্রায় ৪৩৪ দিন।
এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কম ছিল। যেমন অস্থায়ী ঝাপসা বা অন্ধকার দেখার প্রবণতা (৩২%), সামান্য জ্বালা (৩.৭%) এবং মাথাব্যথা (৩.৮%)। গুরুতর কোনো জটিলতা যেমন চোখের চাপ বেড়ে যাওয়া বা রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি ।
ডা. বেনোজ্জির মতে, হালকা প্রেসবায়োপিয়া রোগীরা ১% ঘনত্বেই ভালো ফল পান, তবে বেশি গুরুতর রোগীদের জন্য ২% বা ৩% প্রয়োজন হতে পারে। তিনি বলেন, এটি কখনোই সার্জারির বিকল্প নয়, কিন্তু নিরাপদ, সহজ ও কার্যকর এক সরল বিকল্প, যা রোগীদের চশমার উপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করবে।

এই ড্রপ প্রেসবায়োপিয়া চিকিৎসায় সাড়া তো দিয়েছে, একেবারে নিরাশ হওয়ার মতোও ফলাফল হয়নি। তবুও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এটি এখনো একক-কেন্দ্রিক গবেষণা তাই আরও বিস্তৃত ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা দরকার। বিশেষত, দীর্ঘদিন পাইলোকার্পিন ও এন এস এ আই ডি ব্যবহারে কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা আশা রাখছেন হয়তো এই ড্রপ ভবিষ্যতে কোটি কোটি মানুষকে নতুন স্বচ্ছ দৃষ্টি উপহার দিতে পারবে।

সূত্র: ‘Dose-dependent efficacy and safety of pilocarpine-diclofenac eye drops for presbyopia: a real-world single-center study” by Giovanna Benozzi et.al।;(20.09.2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × four =