বয়স ও লিঙ্গভেদে চোখের জিন থেরাপি

বয়স ও লিঙ্গভেদে চোখের জিন থেরাপি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

‘চিকিৎসার অসাধ্য’ চোখের রোগের চিকিৎসায় নতুন জিন থেরাপি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে বয়স্ক মহিলাদের ক্ষতিকর প্রদাহের ঝুঁকি বেশী। ‘মলিকুলার থেরাপি’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে বয়স এবং লিঙ্গ জিন থেরাপির প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। ব্রিটেনে
প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন। যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, গ্লুকোমা এবং ডায়াবেটিস জনিত চোখের রোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির শিকার। ‘অসাধ্য’ বলে বিবেচিত চোখের রোগের চিকিৎসায় জিন থেরাপি ‘আশার আলো’ দেখালেও ক্লিনিকাল ট্রায়ালে ক্রমবর্ধমান জটিলতার প্রমাণ মিলেছে। প্রদাহজনিত কারণে কিছু রোগীর দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। জিন থেরাপিতে, একটি পরিবর্তিত অ্যাডেনো-অ্যাসোসিয়েটেড ভাইরাস (AAV) ব্যবহার করা হয়। এই ভাইরাসটি নিরাময়কারী জিনগুলিকে রেটিনার কোষে বহন করে। এই বহন-ব্যবস্থা, জিন থেরাপিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কার্যকরভাবে কোষে প্রবেশ করতে এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় জেনেটিক নির্দেশনা দিতে এই ব্যবস্থা খুবই উপযোগী। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রতিকূল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তখনই ঘটে, যখন আমাদের শরীরের ‘রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা’ এই পরিবহনকারী ভাইরাসকে ‘হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করে। যা প্রদাহের মাধ্যমে জানান দেয়। প্রদাহ এই ধরনের চিকিৎসার একটি বড় অন্তরায়। এটি চিকিৎসার কার্যকারিতা সীমিত করে দেয়। জিন থেরাপির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য, গবেষকরা বিভিন্ন বয়সি নারী পুরুষের প্রতিক্রিয়া তুলনা করেছেন। তরুণ পুরুষ ও মহিলারা উভয়েই প্রাথমিকভাবে একই ধরনের রোগ প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তবে তাদের কোষীয় ও আণবিক প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ছিল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে, উভয় লিঙ্গেই দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্রতর প্রদাহ দেখা যায়। অন্যদিকে বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক ফলাফল দেখা যায়। তীব্রতর প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া এবং রেটিনার ক্ষতি হয় । অন্যদিকে বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে অধিকতর যথাযথ রোগ প্রতিরোধক প্রতিক্রিয়া বজায় থাকে। ব্রিস্টল মেডিকেল স্কুলের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট এবং গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ড. অ্যালিসন ক্লেয়ার বলেছেন, “আমাদের গবেষণাটি লিঙ্গ, বয়স এবং ঝুঁকির ভিত্তিতে জিন থেরাপি চিকিৎসার জন্য রোগীদের পৃথক করার গুরুতর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। এটি জিন থেরাপির ঝুঁকি এবং সুবিধা বোঝার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে এবং এই ইঙ্গিত দেয় যে বয়স্ক মহিলা রোগীরা যে কোনো সম্ভাব্য চোখের জিন থেরাপি থেকে গুরুতর প্রতিকূল প্রভাবের ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।” এই গবেষণা ব্যক্তিগত ঝুঁকি বিবেচনা করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। বিশেষ করে বয়ঃপ্রাপ্ত মহিলা রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ সচেতনতা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − 4 =