২০২৭ সালের গ্রীষ্মে সুমেরু মহাসাগরের সমস্ত বরফ গলে যেতে পারে। ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডারের জলবায়ুবিদ আলেকজান্দ্রা জাহান এবং সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অফ গোথেনবার্গের সেলিন হিউজ, কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে সুমেরু মহাসাগরের প্রথম বরফ-মুক্ত দিনের পূর্বাভাস দিয়েছেন। বরফ-মুক্ত উত্তর মেরু আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন করে পৃথিবীর জলবায়ু ও বাস্তুতন্ত্রকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে। বায়ুমণ্ডলীয় এবং মহাসাগরীয় বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং সিইউ বোল্ডারের ইনস্টিটিউট অফ আর্কটিক অ্যান্ড আলপাইন রিসার্চের ফেলো জাহান বলেছেন, আর্কটিকের প্রথম বরফমুক্ত দিনে নাটকীয়ভাবে কিছু পরিবর্তন হবেনা। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য সারা বছর সমুদ্রের বরফ এবং তুষার দ্বারা আবৃত সুমেরু মহাসাগরের প্রাকৃতিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে, সুমেরু মহাসাগরের বরফ প্রতি দশকে ১২% দ্রুত হারে গলছে। ন্যাশানাল স্নো অ্যান্ড আইস ডাটা সেন্টার জানিয়েছে, ১৯৭৮ থেকে রেকর্ড অনুযায়ী এবছর সুমেরু মহাসাগরের বরফ সবচেয়ে কম। নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যখন সুমেরু মহাসাগরে ১ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারেরও কম বরফ থাকবে, তখন সুমেরুকে বরফ মুক্ত বলা হবে। জাহানের পূর্ববর্তী গবেষণা অনুসারে, প্রথম বরফ-মুক্ত মাস প্রায় অনিবার্যভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে আসবে। হিউজ বলেছেন, সুমেরু মহাসাগরের সমস্ত সামুদ্রিক বরফ গলে গেলে কোন ঘটনা ঘটতে পারে তা জানাও গুরুত্বপূর্ণ। জাহান ও হিউজ ৩০০-র বেশি কম্পিউটার সিমুলেশন থেকে আউটপুট ব্যবহার করে প্রথম বরফ-মুক্ত সুমেরু মহাসাগরের দিন অনুমান করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, মানুষ যেভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করছে, বেশিরভাগ মডেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে প্রথম বরফ-মুক্ত দিন ২০২৩ সালের পরবর্তী ৯ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ঘটার সম্ভাবনা। খুব তাড়াতাড়ি হলে সুমেরু মহাসাগরের প্রথম বরফ-মুক্ত দিন তিন বছরের মধ্যে আসতে পারে।
গবেষকরা দেখেছেন যে চরম আবহাওয়ার জন্য অল্প সময়ের মধ্যে দুই মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার বা তার বেশি সমুদ্রের বরফ গলে যেতে পারে। একটা অস্বাভাবিক উষ্ণ অবস্থা প্রথমে সমুদ্রের বরফকে দুর্বল করে দেবে, তারপরে উষ্ণ শীত ও বসন্ত সুমেরু মহাসাগরের বরফ গলাবে। টানা তিন বা তার বেশি বছর ধরে সুমেরু যখন এইরকম চরম উষ্ণতা অনুভব করবে, তখন প্রথম বরফ-মুক্ত দিনের আবির্ভাব হবে। সমুদ্রের বরফ মহাকাশ থেকে আগত সূর্যালোক প্রতিফলিত করে সুমেরুকে উষ্ণতা থেকে রক্ষা করে। বরফ কমে গেলে গাঢ় মহাসাগরের জল সূর্য থেকে আরও তাপ শোষণ করবে, ফলে আর্কটিক বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলবে। গবেষণা যে আশার আলো দেখিয়েছে তা হল, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের তীব্র হ্রাস সুমেরু মহাসাগরের বরফ গলার সময়সীমা বিলম্বিত করতে পারে আর সমুদ্র বরফ-মুক্ত থাকার সময় কমিয়ে দিতে পারে।