একাধিক ভাষা জানার অভ্যাস মানুষের মস্তিষ্ককে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সুস্থ ও তরুণ রাখতে সহায়তা করতে পারে—সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বিস্তৃত গবেষণা এমনটাই প্রমাণ করেছে। গত ১০ই নভেম্বর নেচার এজিং জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় ইউরোপের ৮০ হাজারের বেশি মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বহুভাষী ব্যক্তিদের জৈবিক বার্ধক্য সাধারণত ধীরগতিতে এগোয়। গবেষকেরা জানান, যারা দুই বা তার বেশি ভাষা ব্যবহার করেন, তাদের একভাষী মানুষের তুলনায় দ্রুত-বার্ধক্যের লক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় অর্ধেক কম।
গবেষণার সহ-লেখক ও চিলির সান্তিয়াগোর আদলফো ইবানিয়েজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী আগুস্তিন ইবানিয়েজ বলেন, বহুভাষিতা বার্ধক্য বিলম্বিত করতে পারে কি না—এ প্রশ্ন বহুদিনের। তাঁরা এই বিষয়টিকেই খতিয়ে দেখার জন্য বৃহত্তর পরিসরে পরীক্ষা করে দেখলেন। অতীতের বহু গবেষণায় বহুভাষা ব্যবহারের ফলে স্মৃতি, মনোযোগসহ বিভিন্ন মানসিক ক্ষমতা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হলেও, সেসব গবেষণায় পরীক্ষার পরিধি ছিল ছোট এবং বয়স নিরূপণের পদ্ধতিগুলোও ছিল অনির্ভরযোগ্য। ফলে ফলাফলগুলো অনেক সময়ই অসংগত বা সীমিত পর্যায়ে প্রযোজ্য হতো।
যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কগনিটিভ নিউরোসায়েন্টিস্ট ক্রিস্টোস প্লিয়াটসিকাস মনে করেন, এতো বৃহৎ পরিসরে এবং কঠোর নিয়মানুগ পদ্ধতিতে গবেষণা এর আগে হয়নি। এর ফলাফলগুলো বেশ গ্রহণযোগ্য । অপরদিকে, অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী সুসান টয়ুবনার-রোডস মনে করেন, এই অনুসন্ধান মানুষকে নতুন ভাষা শেখা বা শিখে রাখা ভাষাগুলিকে সক্রিয়ভাবে ব্যবহারে উৎসাহিত করবে।
গবেষকরা ইউরোপের ২৭টি দেশের ৫১ থেকে ৯০ বছর বয়সী মোট ৮৬,০০০ সুস্থ ব্যক্তিকে গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করেন। প্রত্যেকের “বায়োবিহেভিয়োরাল এজ গ্যাপ”—অর্থাৎ প্রকৃত বয়স ও শারীরবৃত্তীয়, সামাজিক ও জীবনযাত্রা-নির্ভর প্রত্যাশিত বয়স-এর ব্যবধান নির্ণয় করা হয়। এই প্রত্যাশিত বয়স নিরূপণের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয় হৃদরোগসহ সামগ্রিক বিপাকীয় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবনযাত্রা, আর্থ-সামাজিক অবস্থাসহ বহুবিধ বিষয়।
এই বয়স-ব্যবধান যদি বেশি হয়, তাহলে ধরে নেওয়া হয় একজন ব্যক্তি তার বাস্তব বয়সের তুলনায় দ্রুত বা ধীরগতিতে বার্ধক্যের দিকে এগোচ্ছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, বহুভাষী মানুষের ক্ষেত্রে এই ব্যবধান উল্লেখযোগ্যভাবে কম—অর্থাৎ তাদের জৈবিক বার্ধক্য ধীরে আসে।
গবেষণাটি ইঙ্গিত দেয় যে নতুন ভাষা শিখতে থাকা বা পূর্বে শেখা ভাষার নিয়মিত ব্যবহার মস্তিষ্ককে অধিক সক্রিয় রাখে, মস্তিষ্কে ক্রমাগত বোধবুদ্ধিগত উদ্দীপনা সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের বয়স বাড়ার গতি কমিয়ে দিতে পারে। ভাষা বদলানো, নতুন শব্দ মনে রাখা, ব্যাকরণগত পার্থক্য সামলানো—এই সবকিছু মস্তিষ্ককে শক্তিশালী ও চৌখস রাখার জন্য এক ধরনের কার্যকর মানসিক অনুশীলন ।
এক কথায়, সুস্থ ও তরতাজা মস্তিষ্কের জন্য নতুন ভাষা শিখতে ও ইতিমধ্যে শেখা ভাষার অনবরত চর্চার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
সূত্র: Want a younger brain? Learn another language by Katie Kavanagh, published in Nature Aging, 10.11.2025.
doi: https://doi.org/10.1038/d41586-025-03677-2.
