বহুভাষিকতা বোধবুদ্ধি বাড়ায়

বহুভাষিকতা বোধবুদ্ধি বাড়ায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫

অল্পবয়স থেকে একাধিক ভাষায় কথা বললে বোধবুদ্ধি (কগনিশন) বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে উত্তরোত্তর বেশি করে সাক্ষ্যপ্রমাণ মিলেছে। একটি সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, যেসব বাচ্চার অটিজম আছে তাদের ক্ষেত্রেও এটা উপকারী। দেখা গেছে একাধিক ভাষায় কথা-বলা বাচ্চারা দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং ভাবনাচিন্তা অনেকটা গুছিয়ে করতে পারছে। গবেষণার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ইউসিএলএ হেল্‌থ নামক পত্রিকায়। কোনোকিছুতে মনোনিবেশ করা, অন্যদের মনোভাব বুঝতে পারা, নিজের ভাব প্রকাশ করা, একই কাজ বা আচরণ বারবার না-করা, ভাষাগত সংযম, নমনীয়তা – এই সব বিষয়ে নানা-ভাষী পরিবারের বাচ্চারা এক-ভাষী পরিবারের বাচ্চাদের তুলনায় অগ্রসর। অটিজম-যুক্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তো বটেই, সাধারণভবেই একথা সত্যি। ইউসিএলএ-র মনোরোগ ও জৈব-আচরণবিদ্যার অধ্যাপক এবং ব্রেন-কানেকটিভিটি অ্যন্ড কগনিশন ল্যবরেটরির অধ্যক্ষ ড. লুসিনা উদ্দিন এই কথা জানিয়েছেন। এই গবেষণার জন্য তাঁরা একভাষী ও বহুভাষী পরিবার থেকে ৭-১২ বছর বয়সের শতাধিক অটিজম-যুক্ত এবং সাধারণ শিশুকে বেছে নিয়েছিলেন। বহুভাষী পরিবারগুলির বেশির ভাগই স্প্যানিশ আর ইংরেজি ভাষী। বাবা-মা দের বলা হয়েছিল বাচ্চাদের সক্রিয়তার হিসেব করে নম্বর দিতে, বিশেষ করে অটিজম-যুক্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। নানা ধরনের কর্মপটুতার মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছিল, যথা : উল্টোপালটা কাজ করা বা কথা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখার ক্ষমতা; ফোন নম্বর প্রভৃতি তথ্য মনে রাখার ক্ষমতা; একটা কাজ সেরে অন্য কাজে যুক্ত হওয়ার হওয়ার ক্ষমতা, (যেমন খেলনাপাতি নিয়ে খেলার পর সেগুলো গুছিয়ে রাখা)। অটিজম-যুক্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আরও লক্ষ্য রাখা হয়েছিল তারা বিভিন্ন প্রসঙ্গ বুঝতে পারে কিনা, মানুষজনের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে পারে কিনা, একই আচরণ বারবার করে কিনা। সমীক্ষার ফল থেকে দেখা গেল, একাধিক ভাষায় কথা-বলা বাচ্চারা প্রতিটি মানদণ্ডেই একভাষীদের তুলনায় পটু। উদ্দিন ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় কথা বলতে গেলেই আপনাকে সেই ভাষাটাকে থামিয়ে অন্য ভাষাটাকে ব্যবহার করতে হবে। আমরা দেখতে চাইছিলাম, এই থামিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াটা দ্বিভাষিকদের মধ্যে বেশি হয় কিনা”। দেখা গেছে দ্বিভাষিকতা, অটিজম-যুক্ত বাচ্চাদের ভাবপ্রকাশের ক্ষমতা বাড়ায়, একই কাজ বারবার করে চলার অভ্যাস কমায়, বিবিধ প্রসঙ্গে উপলন্ধির ক্ষমতা বাড়ায়। এইসব ফলাফলের ভিত্তিতে ড. উদ্দিন আরও ব্যাপক আকারে এই গবেষণা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সক্রিয়তা সংক্রান্ত আরও আরও নানা বিষয়, আরও কিছু ভাষিক পরীক্ষা করার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের মস্তিষ্ক-ক্রিয়ার ছবি তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

সূত্র: https://www.semel.ucla.edu/bccl