বাংলায় বিজ্ঞান ও বিশ্ববাংলা

বাংলায় বিজ্ঞান ও বিশ্ববাংলা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বিধান নগরে ‘বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ আয়োজিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক বাঙালি সম্মেলনের তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিনে ৯ ফেব্রুয়ারি অপরাহ্ণে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে একটি চমৎকার আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হল। অশোক ঠাকুর ও পার্থ ঘোষ ছিলেন এর মূল উদ্যোক্তা। প্রথমে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী শোনালেন ‘ডিজিটাল হিউম্যানিটিজ’ নামক নতুন বিষয়টির কথা। কম্পিউটার কীভাবে সাহিত্য গবেষণা ও সমালোচনার ধারাকে প্রসারিত করছে তার বিস্ময়কর কাহিনি শোনালেন তিনি। অধ্যাপক চৌধুরীর পরিচালনায় কয়েক বছর আগে রবীন্দ্রনাথের সমস্ত ইংরেজি-বাংলা রচনার যাবতীয় পাঠান্তর ও আনুষঙ্গিক তথ্য সংবলিত ‘বিচিত্রা’ ওয়েবসাইটটি ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বের রবীন্দ্র-চর্চাকারীদের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সেই অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা এবার ‘শব্দকল্প’ নামে নতুন একটি রোমাঞ্চকর প্রকল্পে হাত দিয়েছেন। বাংলা ভাষায় যত শব্দ আছে তার একটি সামগ্রিক ডিজিটাল ভাণ্ডার রচনা করছেন তাঁরা। দেখাচ্ছেন, কোন শব্দটি কোন সময় কীভাবে প্রথম বাংলায় ব্যবহৃত হয়েছিল, কীভাবে তার বিবর্তন ঘটেছে। স্থানীয় কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের সহায়তাতেই ‘শব্দকল্প’-র কাজ এগিয়ে চলেছে। অধ্যাপক চৌধুরীর আশা, সবকিছু ঠিকঠাক চললে ২০২৬-এ এই বিপুল কর্মযজ্ঞের প্রথম অধ্যায়টি হয়তো সকলের ব্যবহারের জন্য পেশ করা যাবে। তবে এত বড়ো মাপের কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও অনেক সময় লাগবে, বলাই বাহুল্য। আরও জানা গেল, মূলত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ-বিদেশের প্রাক্তনীদের অর্থানুকূল্যে এই অভাবনীয় রকমের বিশাল কাজটি চলেছে। বলা বাহুল্য, আরও সাহায্য প্রয়োজন। বাংলা ভাষায় আগ্রহী ব্যক্তিগণ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন shabdakalpa.sctr@jadavpuruniversity.in এই ই-ঠিকানায়।
এরপর প্রথিতযশা পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্য বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষাদান ও গবেষণার অনেক বাস্তব ব্যাবহারিক সমস্যার দিকে আলোকপাত করলেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে পুরোনো অনেক ধ্যানধারণা বদলানোর সময় এসে গেছে। তৎসম-বহুল বাংলা, অল্পবয়সীদের হয়তো বিজ্ঞানবিমুখ করে তুলতে পারে, এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আশীষ লাহিড়ী, অক্ষয়কুমার দত্তর বাংলা বিজ্ঞান ও দার্শনিক রচনার বৈশিষ্টা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞান গবেষণায় নয়, বিজ্ঞানের উচ্চশিক্ষাতেও নয়, কিন্তু বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ এবং জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার বিকাশের কাজে বাংলা অত্যন্ত উপযোগী। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া ইংরেজি না-জানার ফলে বিজ্ঞানের উচ্চ মহলে গ্রামাঞ্চলের উজ্জ্বল বাঙালি ছাত্রছাত্রীদের কী ধরনের অসুবিধা ভোগ করতে হয় তার উদাহরণ দেন। তিনি নিজে জন্মসূত্রে বাঙালি না হলেও অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন বাংলায় বক্তব্য পেশ করলেন, মাঝে মাঝে ইংরেজির সহায়তা নিয়ে। সত্যেন্দ্রনাথ বসু-প্রতিষ্ঠিত ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ পত্রিকার বর্তমান সম্পাদক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর সম্পাদনা-অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলায় বিজ্ঞানের বই লেখা ও বিক্রির সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান, বাংলা বিজ্ঞানের বই, এমনকি রবীন্দ্র পুরস্কার-প্রাপ্ত বইয়েরও বিক্রি মোটেই আশানুরূপ নয়। তাই বলে হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেননি তিনি। এরই মধ্যে নানা ধরণের সদর্থক কাজ হয়ে চলেছে, তাও বলেন। সব মিলিয়ে বেশ আলোড়িত হওয়ার মতো একটি আলোচনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty + nine =