বাতের চিকিৎসায় কৃত্রিম তরুণাস্থি

বাতের চিকিৎসায় কৃত্রিম তরুণাস্থি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

হাঁটতে গেলেই হাঁটুর ব্যথা, সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট, হঠাৎ প্রদাহে গাঁট ফুলে ওঠা,এমন সমস্যায় যদি শরীর নিজেই ওষুধ সরবরাহ করে ব্যথা উপশম করতে পারত কি ভালোটাই না হত। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এমন এক অসাধারণ নরম জেল-জাতীয় পদার্থ তৈরি করেছেন, যা ঠিক এই কাজটাই করতে পারে। একে বিজ্ঞানীরা বলছেন কৃত্রিম কার্টিলেজ/ তরুণাস্থি । তরুণাস্থি হাড়ের মতো শক্ত না, হাড়ের গ্রন্থিগুলোতে পিচ্ছিলকারক হিসেবে কাজ করে, হাড়ের মধ্যে ঘর্ষণ কমায় এবং নাক ও কানের মতো সূক্ষ্ম কোষকলাকে রক্ষা করে । এই কৃত্রিম নরম জেল-জাতীয় পদার্থ শরীরের ভেতরে সূক্ষ্ম রাসায়নিক পরিবর্তন শনাক্ত করে সেই বুঝে ব্যথা উপশমকারী পদার্থ নিঃসরণ করবে।

আর্থ্রাইটিস হলে আক্রান্ত গ্রথির ভেতরে সামান্য রাসায়নিক পরিবর্তন হয়, অর্থাৎ জায়গাটি একটু বেশি আম্লিক হয়ে ওঠে। এই জেল সেই সূক্ষ্ম পরিবর্তন চিনতে পারে। যখন অম্লত্ব বাড়ে, জেলটি নরম হয়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে সঞ্চিত ওষুধ বের করতে শুরু করে। ফলে প্রদাহের স্থানেই চিকিৎসা পৌঁছে যায়, শরীরের অন্য অংশে নয়।
এ যেন শরীরের ভেতরের একটি বুদ্ধিদীপ্ত ওষুধের ভান্ডার, যা কেবল প্রয়োজনের সময়ই কাজ করে। এতে ঘন ঘন ট্যাবলেট খাওয়া বা ইনজেকশনের ঝামেলা অনেকটাই কমবে ।
আর্থ্রাইটিসে বিশ্বজুড়ে ৬০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ভোগেন। শুধু যুক্তরাজ্যেই আক্রান্ত প্রায় ১ কোটি মানুষ, যার জন্য চিকিৎসা খাতে বছরে ১০ বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি ব্যয় হয়। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, চলাফেরার অসুবিধা এবং মানসিক কষ্ট এই রোগকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।
যদি এই জেলকে কার্টিলেজের মতো প্রতিস্থাপন করা যায়, তবে এটি নিয়মিত ওষুধের প্রয়োজন কমাবে, প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং রোগীদের জীবনকে আগের থেকে অনেক সহজ করবে। শুধু তাই নয়, এই প্রযুক্তি ক্যানসারের মতো আরও অন্য রোগের ক্ষেত্রেও ব্যবহারযোগ্য হতে পারে, যেখানে প্রদাহ বা রাসায়নিক পরিবর্তন বড় ভূমিকা পালন করে।
এই জেলের বিশেষত্ব হলো “রিভার্সিবল ক্রসলিঙ্ক”, যা pH (হাইড্রোজেন মাত্রা বা অম্ল মাত্রা ) পরিবর্তনের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। প্রফেসর ওরেন শেরম্যানের নেতৃত্বাধীন দল এটি তৈরি করেছেন। তাঁরা বলেন যে তাঁরা অনেকদিন ধরেই কার্টিলেজের মতো পদার্থ বানাতে চাইছিলেন । কিন্তু এর সঙ্গে ওষুধ সরবরাহ যোগ হওয়াটা সত্যিই অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার।

এখনো এই উদ্ভাবন পরীক্ষাগারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। গবেষকরা শিগগিরই এটি প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করবেন। যদি সাফল্য আসে, তবে এটি হতে পারে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক নতুন অধ্যায়, যেখানে শরীর নিজেই সংকেত দেবে, আর চিকিৎসা পৌঁছে যাবে নির্দিষ্ট জায়গায়, নির্দিষ্ট সময়ে।

সূত্র: “Kinetic Locking of pH-Sensitive Complexes for Mechanically Responsive Polymer Networks” by Stephen J.K. O’Neill, Yuen Cheong Tse, et.al; 8 September 2025, Journal of the American Chemical Society.
DOI: 10.1021/jacs.5c09897

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 1 =