বায়ুদূষণের মোকাবিলা: ভারত ও চীন 

বায়ুদূষণের মোকাবিলা: ভারত ও চীন 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫

ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে গিয়ে দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলের বায়ুদূষণ বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছেছে। একাধিক এলাকায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ৪০০–৪৫০ ছুঁয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ‘চরম’ দূষণ হিসেবে ধরা হয়। শীতকালে ঠান্ডা বাতাসে দূষক আটকে রাখায় আতশবাজি, ফসল কাটার পর ক্ষেতের খড় পোড়ানো, যানবাহন ও কল-কারখানার ধোঁয়া পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে। এই প্রেক্ষাপটে চীনের রাজধানী বেইজিং একটি গুরুত্বপূর্ণ তুলনামূলক উদাহরণ হতে পারে। দু দশক আগে ‘বিশ্বের ধোঁয়াশা রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত বেইজিং ২০০৮ অলিম্পিকের সময়, সাময়িক নির্গমন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পথচলা শুরু করে। ২০১৩ সালে জাতীয় পঞ্চবার্ষিক কর্মপরিকল্পনা চালু করে। কয়লাভিত্তিক বয়লার বন্ধ, গণপরিবহন ও বৈদ্যুতিক যান বাড়ানো, শিল্প প্রযুক্তি সংস্কার এবং নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ জোরদার করা হয়। বিশেষ গুরুত্ব পায় ক্ষুদ্র দূষণ কণা PM2.5 কমানো – যা ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তে মিশে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

 

ফলাফল স্পষ্ট। ২০১৩ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে বেইজিংয়ে গড় PM2.5 প্রায় অর্ধেক কমে ৩৬ μg/m³ হয়। ২০২৪ সালে তা নেমে আসে ২৯.৩ μg/m³-তে। ২০২৫-এর প্রথম তিন মাসের গড় ছিল ২৪.৯ μg/m³। যদিও এটি এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকার (৫ μg/m³) চেয়ে বেশি, তবু এ অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৃহত্তর বেইজিং–তিয়ানজিন–হেবেই অঞ্চলে ২০১৫–২০২৩ সময়কালে PM2.5 কমেছে ৪৪.২ শতাংশ। সালফার ডাই-অক্সাইড কমে, ৭৬.৩% এবং নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড কমে ৩৪.৮%। অথচ পরিবেশগত উন্নতির সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি কিন্তু থামেনি। ২০১৩–২০২৪ সময়ে জিডিপি ৭৩% বাড়ে। একই সঙ্গে দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। শিল্প, শক্তি ও পরিবহন খাতে সমন্বিত নীতি, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, কৃষিতে খড় পোড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং বৈদ্যুতিক যান ও নবায়নযোগ্য শক্তির দ্রুত সম্প্রসারণ- এগুলোই এই সাফল্যের ভিত্তি। বায়ুদূষণ সীমা না মানা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও কৃষিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। চীনের অভিজ্ঞতা দেখায়, দৃঢ় নীতি, কার্যকর বাস্তবায়ন ও আন্তঃ ক্ষেত্র সমন্বয়ে উন্নয়ন বজায় রেখেই নির্মল বাতাস অর্জন করা সম্ভব। দিল্লি ও ভারতের জন্য পাঠ স্পষ্ট। উচ্চদূষণকারী শিল্প নিয়ন্ত্রণ, নির্মাণস্থলে কার্যকালে ওপর ধুলোর নজরদারি, বৈদ্যুতিক গণপরিবহনের বিস্তার এবং রাজ্য-সমন্বিত ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করলে, সুস্থায়ী বায়ুগুণ উন্নত করা যায়।

 

সূত্র : What New Delhi can learn from China’s war on air pollution; Al Jazeera News; Dec, 2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × five =