বায়ুদূষণ মানুষের গড় আয়ু কমাচ্ছে

বায়ুদূষণ মানুষের গড় আয়ু কমাচ্ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
বায়ুদূষণ

বায়ুদূষণ মানুষকে শারীরিকভাবে অসুস্থ করার পাশাপাশি, মানুষের গড় আয়ু কমাচ্ছে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য এনার্জি পলিসি ইন্সটিটিউট তাদের বিশ্বব্যাপী এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স ২০২৪ -বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্ট অনুসারে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত অঞ্চলের বাতাস কম দূষিত অঞ্চলের তুলনায় ৬গুণ বেশি দূষিত। আর এই দূষিত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার ফলে এই অঞ্চলের মানুষের গড় আয়ু ২.৭ বছর কমে যচ্ছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার পক্ষে সুখবর হল এই অঞ্চলে এক বছরে দূষণ ১৮% কমেছে। ভারতের বাতাসের দূষণ কমে মানুষের গড় আয়ু এক বছর বেড়েছে। বাতাসে ভেসে থাকা কঠিন বা তরল কণার পরিমাণ ৫১.৩ মাইক্রোগ্রাম/ঘন মিটার থেকে কমে ৪১.৪ মাইক্রোগ্রাম/ ঘনমিটার হয়েছে। ভারতের ন্যাশানাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রামের আওতায় থাকা জেলাগুলোর বায়ুর PM2.5 মাত্রা ১৯% হ্রাস পেয়েছে। অন্য জেলাতে এই হ্রাসের পরিমাণ ১৬%। জেনে খুশি হবেন, বায়ুদূষণ সবচেয়ে কমেছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া আর ঝাড়খন্ডের ধানবাদ জেলায়।
শ্রী রামচন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর ডিন কল্পনা বালাকৃষ্ণান জানিয়েছেন, আয়ু বৃদ্ধি বলতে বোঝায় PM2.5 মাত্রা হ্রাসের ফলে স্বাস্থ্যকরভাবে কয়েক বছর বেশি বাঁচা৷ কার্ডিওভাসকুলার ও শ্বাসযন্ত্রের রোগ, নিউমোনিয়া, শিশুর বৃদ্ধির ঘাটতিতে ভোগা বায়ু দূষণের সাথে যুক্ত। তিনি জানিয়েছেন, বায়ুর গুণমানের সাম্প্রতিক উন্নতি সত্ত্বেও, দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত অঞ্চল। উচ্চ দূষণের জন্য বিশ্বব্যাপী মানুষের মোট আয়ুষ্কাল যত কমে তার মধ্যে ৪৫% অবদান দক্ষিণ এশিয়ার। আর বিশ্বের সবচেয়ে বায়ুদূষিত দেশ হল বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান। ১৮% বাতাসের দূষণ কমার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে গবেষণায় জানানো হচ্ছে, অস্বাভাবিক তীব্রগতির হাওয়া ২০২২-২৩ এর শীতে PM2.5 দূষণ কমানোর জন্য দায়ী।
ভারত ২০১৯ সাল থেকে বাতাস দূষণমুক্ত করতে ন্যাশানাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম নিয়েছে। ২০২০ সালে ভারত স্টেজ VI প্রোগ্রামে গাড়ির নির্গমনের মাপকাঠি স্থির করা হয়েছে, রান্নাঘরে ধোঁয়ামুক্ত জ্বালানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে গাড়ির বিদ্যুতায়ন, ধূলিকণা অপসারণ, আবর্জনা ব্যবস্থাপনার ওপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। দূষণ হ্রাস সত্ত্বেও, ১৪০ কোটি ভারতীয় এখনও এমন এলাকায় বাস করেন যেখানে বার্ষিক গড় ভাসমান কণা দূষণের মাত্রা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অতিক্রম করছে। তাছাড়াও আমাদের জনসংখ্যার ৪২,৬% এমন এলাকায় বাস করেন যেখানে দূষণের মাত্রা ভারতের জাতীয় বায়ু মান ৪০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার অতিক্রম করছে। এনআরডিসি-র প্রাক্তন প্রধান পলাশ মুখার্জি জানিয়েছেন, ন্যাশানাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রামে সবে কাজের গোড়াপত্তন শুরু করেছে, এর সুফল পেতে আরও সময় লাগবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 + nineteen =