বার্ধক্য বিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে

বার্ধক্য বিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

বার্ধক্যের রহস্য সহস্রাব্দ ধরে মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের মধ্যে অনেকে এই প্রক্রিয়াটি থামাতে বা বিপরীতমুখী করতে ইচ্ছুক, কারণ বার্ধক্যের সাথে সাথে শরীরের বেশিরভাগ কার্যকারিতার ধীরে ধীরে অবনতি ঘটে। যদিও বার্ধক্য জীবনের একটি প্রাকৃতিক অংশ, কিন্তু বিবর্তনের সময় এই প্রক্রিয়াটির উত্থান সম্পর্কে জীববিজ্ঞানীদের অনেকটাই অজানা। বার্ধক্য অনিবার্য কিনা তা স্পষ্ট নয় কারণ এমন জীব রয়েছে যাদের আপাতদৃষ্টিতে বয়স হয় না; তদুপরি, প্রকৃতিতে পুনরুজ্জীবনের ঘটনা রয়েছে যেমন, কিছু কচ্ছপের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী বয়সের সাথে উন্নত হয়। ইনস্টিটিউট অফ ইভোলিউশনের শিক্ষাবিদ ইয়ার্স স্যাথমারির নেতৃত্বে গবেষকরা পূর্বে প্রস্তাবিত কিন্তু এখনও অপ্রমাণিত বার্ধক্যের তত্ত্বের বৈধতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। তত্ত্ব অনুসারে সঠিক পরিস্থিতিতে, বিবর্তন বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনের বিস্তারকে সমর্থন করতে পারে। গবেষণাটি বিএমসি বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
নিজেদের অনুমান পরীক্ষা করার জন্য, গবেষকরা তাদের তৈরি করা একটি কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করেছিলেন। মূলত, এই ধরনের মডেলের সাহায্যে, বিবর্তনীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী কয়েক ঘন্টার মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায় আর লক্ষ লক্ষ বছর অপেক্ষা করতে হয়না। আধুনিক বিবর্তনীয় গবেষণা কম্পিউটার মডেলিং ছাড়া অকল্পনীয়। গবেষণার মৌলিক প্রশ্নটি সহজ ছিল: বার্ধক্যের অর্থ কী? বিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এর কী কাজ, নাকি বার্ধক্য সত্যিই জীবনের একটি তিক্ত এবং মারাত্মক ফল? স্যাথমারির মতে বার্ধক্যের জন্য প্রাকৃতিক নির্বাচন উপাদান থাকলে এর বিবর্তনীয় কাজ থাকতে পারে আর গবেষকরা এই নির্বাচনটি উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন। পূর্বের ব্যাখ্যা অনুসারে, মানুষের মধ্যে বার্ধক্য প্রাকৃতিক নির্বাচন ছাড়াই আবির্ভূত হয়। এর কারণ হল মৃত্যু অনিবার্য, আমরা সকলে হয় তাড়াতাড়ি বা পরে রোগে আক্রান্ত হয়ে বা কোনো দুর্ঘটনায় মারা যাতে পারি, সেখানে বয়স বা বার্ধক্য কোনো কারণ নয়, তাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের শক্তি মানুষের মধ্যে দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে বয়সের ওপরে যে জিনগুলো বিরূপ প্রভাব ফেলে সেগুলো একত্রিত হয় এবং বার্ধক্য নিয়ে আসে, যার অর্থ বার্ধক্য বিবর্তনের একটি সমান্তরাল পরিণতি এবং এর কোন অভিযোজন সংক্রান্ত ক্রিয়া নেই।
গত শতাব্দীতে, বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে, অনিবার্য বার্ধক্যের ব্যাখ্যার জন্য বেশ কয়েকটি বিবর্তনীয় তত্ত্ব তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল বার্ধক্যের কোন ইতিবাচক কাজ নেই। অনেক বিজ্ঞানী এই অনুমানটিকে সত্য হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু যখন কিছু জীব আবিষ্কার হল যাদের বার্ধক্য আসে না, তখন আরও বেশি সংখ্যক গবেষক বার্ধক্যের অনিবার্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং পরামর্শ দিয়েছিলেন যে বার্ধক্যেরও কিছু সুবিধা বা কাজ থাকতে পারে। মডেলটির মাধ্যমে জীববিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে বার্ধক্য প্রকৃতপক্ষে বিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এটি পরিবর্তনশীল বিশ্বে সুবিধাজনক কারণ দ্রুত অভিযোজনের মাধ্যমে সহনশীল বৈশিষ্ট্যগুলো আরও দ্রুত খুঁজে পাওয়া যেতে পারে, যার ফলে পরবর্তী জিনের বেঁচে থাকা এবং বিস্তারকে সমর্থন করে। অর্থাৎ, বার্ধক্য একটি সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠতে পারে এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আদর্শ হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × three =