বালি তোলার দূরপ্রসারী কুফল

বালি তোলার দূরপ্রসারী কুফল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ মার্চ, ২০২৫

আমাদের চারপাশের সবকিছু তৈরির জন্য বালি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, কাচ, এমনকি যন্ত্রপাতি তৈরিতেও বালি ব্যবহৃত হয়। সস্তা ও সুলভ বলে আমরা অনেক বেশি বালি ব্যবহার করছি। কিন্ত এর ফলে সামুদ্রিক প্রাণী এবং পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে । বিজ্ঞানীরা চান প্রয়োজন মতো বালি সংগ্রহ করা এবং প্রকৃতি রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে বের করতে। বালি তোলা সমুদ্র ছাড়াও অন্যান্য অনেক জায়গা ও মানুষকে প্রভাবিত করে। বিশেষ ধরণের পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায় কিভাবে বালি নিষ্কাশণ বিভিন্ন এলাকাকে প্রভাবিত করে। যেমন, যে জায়গা থেকে বালি নেওয়া হয় শুধুমাত্র সেখানকার পরিবেশই নয়, বালি পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত পথগুলি ও যেসব শহরে নির্মাণকার্যে বালি ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলিরও ক্ষতি হয় ।
আমরা সমুদ্রের তলদেশ থেকে অনবরত বালি তুলছি।
এইভাবে বালি তোলা পরিবেশের জন্য মারাত্মক সমস্যা তৈরি করছে। এর ফলে ঢেউয়ের ধাক্কায় উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষয় হয়, প্রাণীদের বাসস্থান ধ্বংস হয় এবং ক্ষতিকারক প্রজাতির বিস্তার ঘটে। এটি জলকে দূষিত করে মাছ ধরার উপরও প্রভাব ফেলে।বালির পরিমাণ কমলে জল ঘোলা হয়। এছাড়াও জল জমে গিয়ে সামুদ্রিক ঘাস এবং প্রবালকে ঢেকে দেয়।
সমুদ্রে বালির পরিমাণ কমে যাওয়ায় সামুদ্রিক প্রাণীদের বাসস্থান ভেঙে পড়তে পারে, বালির অভাবে সমুদ্রের ঢেউ ও স্রোতের গতিপথ বদলে যেতে পারে, যা পুরো প্রকৃতির ওপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে সামুদ্রিক প্রাণীদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
বিজ্ঞানী অরোরা টরেস ব্যাখ্যা করে বলেন যে বালি কেবল একটি সাধারণ উপাদান নয়। এটি উপকূলীয় পরিবেশ গঠনে, উপকূলরেখার ক্ষয় রোধে এবং প্রকৃতি আর সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকা সংস্থানে বড় ভূমিকা পালন করে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন এটিকে আলাদা সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করার পরিবর্তে, বৃহত্তর পরিবেশ নীতির অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যেমন সামুদ্রিক অঞ্চলগুলিকে রক্ষা করে অতিরিক্ত বালি তোলার ক্ষতি রোধ করা যায়।অন্যদিকে নীল কার্বন কৌশলগুলি উপকূলীয় আবাসস্থল যেমন ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব দেয় যা কার্বন সঞ্চয় করে এবং উপকূলরেখা রক্ষা করে। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা পরিকল্পনাগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী ঝড়ে বালি উড়ে যাওয়ার প্রভাবকেও কমায়।
বিজ্ঞানী টরেস এবং লিউ প্রথম ২০১৭ সালে বিজ্ঞানের পত্রিকায় একটি
গবেষণাপত্রে বালির সমস্যাগুলি তুলে ধরেন। ‘একই বসুন্ধরা ‘ ভাষণে তারা বিশ্বব্যাপী বালির গুরুত্বকে মাছ ধরা ও পর্যটনের মতোই সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন।যদি মানুষ বুঝতে পারে যে অতিরিক্ত বালি তোলা পরিবেশ ও অর্থনীতির ক্ষতি করছে, তাহলে সবাই এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ নেবে। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলীয় এলাকাগুলো আরও বিপদে পড়ছে।তাই এখনই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি যাতে ভবিষ্যতে বড় কোনো বিপদ না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − three =