বিগত দুদশকে বিধ্বংসী দাবানলের সংখ্যা বাড়ছে

বিগত দুদশকে বিধ্বংসী দাবানলের সংখ্যা বাড়ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ জুলাই, ২০২৪
দাবানল

খবরের কাগজে, সামাজিক মাধ্যমে সর্বত্র আজকাল দাবানলের খবর উঠে আসে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে দাবানল সেই স্থানের অরণ্য, বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করে দিচ্ছে। সম্প্রতি, গ্রিসে একসাথে ৭০ টারও বেশি স্থানে দাবানল লেগেছে। ২০২৪ সালের গোড়ার দিকে, চিলির ভয়ঙ্কর দাবানলে ১৩০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। গত বছর, কানাডায় দাবানল মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জ্বলেছিল; আগস্টে, হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপ দাবানলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আর বছর বছর এই ধ্বংসের তালিকা বেড়েই চলেছে, বিপর্যয়কর চরম দাবানল প্রায়শই ঘটছে। নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীর চরম দাবানলের সংখ্যা এবং তীব্রতা গত দুই দশকে দ্বিগুণ হয়েছে। এই গবেষণায় তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা, ২০০৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২১ বছরের মধ্যে বিভিন্ন দাবানলের আগুন থেকে নির্গত শক্তি গণনা করেছেন। এরজন্য তারা উপগ্রহ-ভিত্তিক সেন্সর ব্যবহার করেছিলেন যা দাবানলের আগুন থেকে তাপ শনাক্ত করতে পারে, শক্তি পরিমাপ করতে পারে। দেখা গেছে ২০১৭ সাল থেকে একমাত্র ২০২২ সাল বাদে ছবছরে এই ভয়ঙ্কর দাবানলের সংখ্যা ও শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা ৩ কোটি দাবানলের মধ্যে ২৯১৩ টা দাবানলকে সবচেয়ে শক্তি নির্গমনকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এগুলোর তীব্রতাও মারাত্মক। গবেষণার শুরুতে যে দাবানলগুলোকে ‘চরম’ হিসেবে অ্যাখ্যা দেওয়া হত, আর এখন যাদের ‘চরম’ বলা হয় তাদের তীব্রতা আগের চরম দাবানলগুলোর দ্বিগুণ হয়ে গেছে। প্রতি বছর অরণ্য পুড়ে যাওয়ার পরিমাণ কিছুটা বাড়ছে আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কার্বন নির্গমন। পোড়ার তীব্রতা হল আগুন কতটা বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে তার সূচক। দেখা গেছে বিভিন্ন স্থানে তীব্রভাবে পোড়া অঞ্চল বাড়ছে।
অঞ্চলভেদে দাবনলের সংখ্যা, তীব্রতায় পার্থক্য দেখা যায়। সুদূর উত্তরের বোরিয়াল বন এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে পাইনের বনে দাবানল বেশি দেখা যায়। পূর্ব সাইবেরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে, কানাডায় দাবানল বেশি ঘটে। পরিবেশ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা দাবানলের বিধ্বংসী প্রকৃতি নির্ধারণ করে। যেমন ভূমধ্যসাগরের আশেপাশে নাতিশীতোষ্ণ অরণ্যে, আগুনের কার্যকলাপ বা আচরণে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি, কিন্তু সেখানে মানুষের বাড়ি ঘরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মানুষ সমাজের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। গবেষণায় উঠে না এলেও ক্রমবর্ধমান দাবানলের ক্রিয়াকলাপের পেছনে মূল কারণগুলো মোকাবিলা করা জরুরি, যেমন ভূমির আচ্ছাদন পরিবর্তন, বন নীতি এবং ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন, যা সর্বগ্রাসী দাবানল রুখতে কার্যকর হতে পারে।