বিজ্ঞানীদের ওপর তামাক-শিল্পর আক্রমণ

বিজ্ঞানীদের ওপর তামাক-শিল্পর আক্রমণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ জানুয়ারী, ২০২৫

যেসব বিজ্ঞানী তামাক, অ্যালকোহল এবং অতিরিক্ত মশলাদার খাবারের কুপ্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন, তাঁদের নানারকম আক্রমণের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, এমনকি শারীরিক আক্রমণও। ব্রিটেন, ফ্রান্স আর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক ‘হেল্‌থ প্রোমোশন ইন্টারন্যাশনাল’ পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রচুর সাক্ষ্যপ্রমাণ দাখিল করেছেন। সবচেয়ে বেশি করে যে-আক্রমণটা করা হচ্ছে সে হল খবরের কাগজে, বিজ্ঞাপনে, প্রকাশ্য বিবৃতিতে, ওয়েবসাইটে, সোশ্যাল মিডিয়াতে, টিভি অনুষ্ঠানে, সভাসমিতিতে গবেষক বিজ্ঞানীদের বদনাম করা। জানা গেছে, পোল্যান্ডে অল্পবয়সীদের তামাকের নেশা ধরানোর একটা সুপরিকল্পিত প্রচার অভিযান চলছে। যাঁরা এতে আপত্তি করছেন, তাঁদের তামাক শিল্প-বিরোধী ‘জঙ্গী উগ্রবাদী’ নাম দেওয়া হয়েছে। এরকম কথাও রটানো হচ্ছে যে ধূমপায়ীরা নাকি ‘স্বাস্থ্য ফ্যাশিস্টদের’ আক্রমণের শিকার। তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার যাঁরা পক্ষপাতী তাঁদের ‘নিকোটিন নাৎসি’ বলা হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, এসবের লক্ষ্য হল নিয়ন্ত্রণী নিয়ম চালু করার পথে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করা। তামাক ও অতিরিক্ত চিনি-মেশানো পানীয়র ওপর নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করবার জন্য যাঁরা প্রচার করছেন, তাঁদের ছ-জনকে হয় শারীরিক আক্রমণের হুমকি দেওয়া হয়েছে, কেউ কেউ সরাসরি শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনা ঘটেছে আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া আর ব্রিটেনে। একটা চরম ঘটনা ঘটেছিল নাইজেরিয়াতে, ২০১২ সালে। তামাক-নিয়ন্ত্রণের এক প্রধান প্রবক্তা টিভিতে তামাক-শিল্পকে সমালোচনা করার পর তাঁর বাড়িতে বন্দুক নিয়ে আক্রমণ চালানো হয়েছিল, তাঁর বাড়ির দারোয়ান এবং তাঁর শ্যালককে গুলি করে মারা হয়েছিল। কলম্বিয়াতে ডাক্তার এস্পারেন্‌জা চেরন অতিরিক্ত চিনি-মেশানো পানীয়র ওপর ২০% কর আরোপ করার জন্য প্রচার করায় ফোনে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তাঁর গাড়ির পিছনে মোটর সাইকেল আরোহী গুন্ডা লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটেনের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কারেন ইভান্‌স-রিভ্‌স এই গবেষণাপত্রটির সহ-লেখিকা। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে সোশাল মিডিয়াতে বিদ্রূপ করা হয়েছিল, একটি তামাক কোম্পানি এবং কিছু নিও-লিবারাল ব্লগার আমার গবেষণাকে নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিল’। এই কাজ চালিয়ে গেলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। ‘এভাবে সারাক্ষণ নজরদারির অধীনে আছি জানলে লোকের মনে অসম্ভব কষ্ট হয়’। তবে আশার কথা এই, এতসব আক্রমণ সত্ত্বেও বিরল দু একটি ক্ষেত্র ছাড়া এঁরা পিছু হঠেননি।