বিজ্ঞানীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটির ফাটল নিয়ে সতর্ক করেছেন

বিজ্ঞানীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটির ফাটল নিয়ে সতর্ক করেছেন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এত বেশি ভূগর্ভস্থ জল তোলা হয়েছে যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাইলের পর মাইল ধরে মাটি ফাটল ধরে বিভক্ত হতে শুরু করেছে। এই বিশাল ফাটল বা ফিসার, অ্যারিজোনা, উটাহ এবং ক্যালিফোর্নিয়াতে দেখা গেছে। অ্যারিজোনা ভূতাত্ত্বিক জরিপ থেকে জানা গেছে বর্তমানে ১৬৯ মাইল বিস্তৃত ফাটল রয়েছে। ফাটলগুলো পৃথিবীর টান বা চাপের লক্ষণ। ভূগর্ভস্থ জলের স্তর সরে গেলে ভূমির বিশাল সমতল অঞ্চল মাটিতে বসে যায়। পাহাড়ের মধ্যবর্তী অববাহিকায় সাধারণত ফাটল দেখা দেয় যা বাড়িঘর, রাস্তা, খাল এবং বাঁধের ক্ষতি করতে পারে সেইসাথে সম্পত্তি, গবাদি পশু এবং মানুষের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
ভূগর্ভস্থ জল পৃথিবীর মিষ্টি জলের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে একটা – এটা সমস্ত পানীয় জলের প্রায় অর্ধেক এবং বিশ্বব্যাপী সেচের প্রায় ৪০% সরবরাহ করে। পৃথিবী যতটা প্রাকৃতিকভাবে পূরণ করতে পারে তার তুলনায় মানুষ ভূগর্ভস্থ জল অনেক দ্রুত পাম্প করছে । অ্যারিজোনা জিওলজিক্যাল সার্ভেতে আর্থ ফিসার নিয়ে গবেষণাকারী জোসেফ কুক বলেন, যখন ভূপৃষ্ঠের নীচের প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে অত্যধিক ভূগর্ভস্থ জল পাম্প করে তোলা হয়, তখন ভূমি ধসে গিয়ে ফাটল সৃষ্টি হয়। এই ফাটল কোনো প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, এটা মনুষ্যসৃষ্ট।
ইউএস ওয়াটার সিস্টেমের প্রায় ৯০% সরবরাহকারী অ্যাকুইফারগুলি এত মারাত্মকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে যে তারা জল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে না। অ্যাকুইফারগুলি পুনরুদ্ধার করতে একশো বছর বা হাজার বছরও লাগতে পারে যদি তাদের আদৌ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীগুলি সঙ্কুচিত হচ্ছে, ফলে কৃষকরা চাষের জলের জন্য ভূগর্ভস্থ জলে ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। কলোরাডো নদী, যা অ্যারিজোনা সহ দক্ষিণ-পশ্চিম জুড়ে কৃষকদের জন্য জল সরবরাহ করে, তা ২০০০ সাল থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ২০% হ্রাস পেয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে পূর্বাভাস অনুযায়ী যদি কলোরাডো নদী অববাহিকায় বিশ্ব তাপমাত্রা আরও ২-৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধি পায়, তবে ১০% থেকে ৪০% পর্যন্ত নদী প্রবাহ হ্রাস পেতে পারে।
ভূগর্ভস্থ জল তোলা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ কোনো নিয়ন্ত্রণবিধি না থাকাতে, বা তাতে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়াতে যথেচ্ছ জল তোলা হয়েছে। পাশাপাশি শুষ্ক অঞ্চলে চাষ আবাদের জন্য এই জল ব্যবহার হয়েছে। এই ধরনের কাজ বন্ধ না হলে মাটির এই বিশাল ফাটলের সমস্যা বাড়তেই থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × four =