বিজ্ঞান বোঝাতে, ‘গল্প বলা’ জরুরি

বিজ্ঞান বোঝাতে, ‘গল্প বলা’ জরুরি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ এপ্রিল, ২০২৫
science

পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। অথচ জনমানসের হিতে যে কাজ সে কাজের ভাষা প্রায়শই দুর্বোধ্য। একাডেমিক জার্নালে বিজ্ঞানীরা তাদের কাজ প্রকাশ করেন ঠিকই, কিন্তু তাদের লেখা প্রায়ই প্রকরণ কন্টকিত এবং আবেগহীন । বিষয় কাঠিন্যের পাশাপাশি, জটিল ভাষার ভারে লেখাগুলি অ-বিশেষজ্ঞদের বোঝার পথকে আরও কঠিন করে তোলে। মানুষের কাছে পৌছাতে গেলে ভাষা হতে হবে সহজ সরল। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা “গল্পের ছলে বিজ্ঞান” চর্চার পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন। এই চর্চা, বিজ্ঞান ও সমাজ উভয়ের জন্য উপকারী বলে তাঁরা মনে করেন। তারা বলছেন, বিজ্ঞানের সত্যতা বজায় রেখে আবেগপূর্ণ গল্প বলতে পারলে, বিজ্ঞানীর সফলতা বাড়ে। অধ্যাপক কারেন অ্যান্ডারসন বলেন, “পরিবেশ বিজ্ঞানী হিসেবে, আমরা নিজেরাই বিশ্বকে রক্ষার জন্য পদক্ষেপের অভাবে হতাশ হয়ে যাই, কখনও কখনও অসহায় বোধ করি। ” কিন্তু গবেষকদের কাছে তাদের ‘যুক্তিসম্মত’ হওয়ার প্রত্যাশা থাকে অনেক। তাই, “তাদের আবেগপূর্ণ হওয়া মানেই যেন কম বস্তুনিষ্ঠ এবং কম বিশ্বাসযোগ্য হয়ে পড়া”। এই কারণেই, লেখায় সৃজনশীল দক্ষতা এবং আবেগ প্রকাশের সুযোগ কমে যায়। অথচ মানুষের মনে প্রবেশ করতে, জ্ঞানের পাশাপাশি এই দুটিরই সমান গুরুত্ব রয়েছে। ড. ক্যারিন ক্রিচটন বলেন যে বর্তমান একাডেমিক লেখার পদ্ধতি ১৭ এবং ১৮ শতাব্দীতে উদ্ভূত হয়েছিল। তখন বিজ্ঞানীরা একে অপরের জন্য লিখতেন। তিনি বলেন, “সেই ধরণের লেখার অবশ্যই নিজস্ব একটি স্থান আছে। কিন্তু আমরা শুধুমাত্র একাডেমিক আগ্রহের জন্য বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করি না”। জলবায়ু এবং জৈববৈচিত্র্য সংকট নিয়ে সকলেরই আগ্রহী হওয়া উচিত। আমরা আসলে পৃথিবীর হিতের কথা বলছি না, যেন আমাদের বাড়ির ভালো থাকার কথা বলছি । পিটল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যাঞ্জেলা গ্যালেগো-সালা আরও বলেন, “আমরা এই বাস্ততন্ত্রগুলি অধ্যয়ন করি কারণ আমরা এগুলিকে ভালোবাসি। কিন্তু আমাদের এই ভালোবাসা থেকেই দূরে সরে থাকার প্রত্যাশা করা হয়। কাজের প্রায় সমস্ত যোগাযোগে, বিজ্ঞানীদের যেন এক কঠোর মহামানবের ‘মুখোশ’ পড়ে থাকতে হয়। এই মুখোশই যেন নির্ভেজাল সঠিক তথ্য এবং বিশ্লেষণের একটি আবেগহীন উৎস। বিজ্ঞানে বিজ্ঞানীর জীবনী বা ব্যক্তিগত গল্প, কাজের জায়গা, প্রণালী, আবিষ্কারের পিছনের গল্পও থাকে। যেমন, প্রকৃতি তথ্যচিত্র ব্লু প্ল্যানেট ২- এর প্রতিটি পর্ব শেষে “ইনটু দ্য ব্লু” এর মতো অন্তরালের কাহিনী। কখনও কখনও এই গল্পগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানর জন্য, অনুপ্রেরণা যোগাতে এবং বিষয়গুলির সাথে সংযোগ তৈরি করতে। এক্ষেত্রে গবেষকরা পরিবেশবিজ্ঞানের যোগাযোগের উপায় হিসাবে ‘গল্পের ছলে বিজ্ঞান’ চর্চার জন্য প্রস্তাব করেন। লেখক স্যার টেরি প্র্যাচেট বর্ণিত ‘গল্প বলার শিম্পাঞ্জি’ এর উদাহরণ। এই পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে কথাশিল্প। চিরাচরিত বৈজ্ঞানিক লেখার পাশাপাশি প্রকাশনার প্ল্যাটফর্মগুলিকেও এমনি সহজ পরিবেশনায় মানুষের কাছে পৌছাতে হবে। ড. ক্রিচটন বলেন, “যোগাযোগের বর্তমান পদ্ধতিগুলি কাজ করে না সেভাবে। এদিকে জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক বিশ্বের ধ্বংস অব্যাহত রয়েছে।” মানুষ গল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। ভালো গল্প বলা বিজ্ঞানীরা আমাদের পরিবেশ এবং বাড়ি অর্থাৎ পৃথিবীকে রক্ষা করে, সমগ্র মানুষ জাতির হিতে অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত করবেন। তাই কিছু ভিন্ন চেষ্টাই সহজ পথ…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − nine =